ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলগুলো জরুরিভাবে জাতীয় দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুজনের আয়োজিত ‘হাওর এলাকার হাহাকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তার কারণে হাওর অঞ্চলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাওরের বাঁধগুলো সঠিকভাবে আটকানো হলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। সরকারের ভুলের কারণে বন্যাকবলিত ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ সর্বহারা হয়ে গেছেন।
‘এ পরিস্থিতি থেকে সরকারের কিছু শেখার নেই’ মন্তব্য করে আবুল মকসুদ বলেন, ‘সরকারের কখনোই শিক্ষা হবে না। যদি হতো তবে দেশের সব অঞ্চলের বাঁধ ভেঙে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’ সরকারকে এটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে এর প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানান তিনি।
সুজনের সভাপতি অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, হাওরাঞ্চল এখনও দুর্গত এলাকা ঘোষণা না করায় ত্রাণ-তহবিল আসছে না। দুর্নীতির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারকে এ ধরনের দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। যথাসময়ে যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে আজ প্রায় দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। পাশাপাশি পানি শুকিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে সার-বীজ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পরিবেশকর্মী সৈয়দ রিজওনা হাসান বলেন, ইউরেনিয়ামসহ নানা কেমিক্যালের কারণে গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। সেখানে ক্ষতিকারক কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে সেটি নির্ণয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি করার প্রস্তাব করেন তিনি। পাশাপাশি মৃত গবাদিপশুগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষারও দাবি জানান।
প্লাবিত হাওর এলাকগুলো জাতীয় দুর্গত এলাকা ঘোষণা করলে সরকারের কী ক্ষতি হবে- এমন প্রশ্ন তুলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, সেখানে প্রায় দুই কোটি মানুষ বন্যাকবলিত। এরপরও বিষয়টি স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে মনে হচ্ছে কার? এ বিষয়ে সরকারকে জ্ঞানার্জনের পরামর্শ দিয়ে তিনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো জাতীয় দুর্যোগপূর্ণ এলাকা ঘোষণার আহ্বান জানান।
সুজনের দেয়া প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২ আলোকে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকাগুলো দুর্গত এলাকা ঘোষণা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জরুরি সহায়তা ও পুনর্বাসন, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত, শাস্তি নিশ্চিত, হাওর অঞ্চলের বাঁধগুলো যুগোপযোগী করা, জরুরি ভিত্তিতে দুর্যোগ কাটাতে স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা উল্লেখ্যযোগ্য।