নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সোমবার রাজধানী ঢাকা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, গার্ড অব অনার প্রদান, কুচকাওয়াজ প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
দিবসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদিন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।
মুজিব নগর দিবস উপলক্ষে সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মেহেরপুর থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রোববার সূর্যোদ্বয়ের সাথে সাথে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের পাদদেশে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু করেন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও স্থানীয় জেলা প্রশাসন যৌথভাবে দিনব্যাপি কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল ৮টায় মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজিবি, পুলিশ বাহিনী, আনসার, বিএনসিসি, বয়স্কাউট, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের গার্ড অব অনার প্রদান ও কুচকাওয়াজ প্রদর্শন। দিবসটি উপলক্ষে মুজিবনগরকে বর্নিল সাজে সাজানো হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০ টায় শেখ হাসিনা মঞ্চে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মুজিবনগর সরকার দিবস উদযাপন প্রস্তুত কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক খায়রুজ্জামান লিটন ও আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ।
যশোর থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে জেলায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপিত হয়েছে।
জেলা শহরের কালেক্টরেট চত্বর থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় শোভাযাত্রার উদ্ধোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবির।
মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ গ্রহনে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে তা শেষ হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ‘ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ কালীন বৃহত্তর যশোর বিএলএফ’র ডেপুটি কমান্ডার রবিউল আলম, যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ কবীর, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার প্রকৌশলী আবুল হোসেন ও জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ডিএম শাহিদুজ্জামান।
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ জেলায় নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার দিবস উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এমরান হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মো. রোকন উদ্দিন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান।
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জেলায় আজ নানা কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে দুপুর বারোটায় জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির উদ্যোগে জেলার টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল হামিদ এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা, জয়পুরহাট ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকার দিবস উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।