গাজীপুুরের কালীগঞ্জে আব্দুল মালেক (৩৫) নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় দু’টি মামলা হয়েছে। সোমবার সকালে নিহতের ছোটভাই আবুল কাশেম বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচণার একটি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া নিহতের স্ত্রী রানু বেগম বাদী হয়ে নারী শিশু অধিকার আইনে ধর্ষণ চেষ্টার একটি মামলা (নং ১১) দায়ের করেছেন। দু’টি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলম চাঁদ।
নিহত মালেক উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মোহানী (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের মৃত আকবর আকন্দের ছেলে। তিনি স্থানীয়ভাবে টিউবওয়েল শ্রমিকের কাজ করতেন।
জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাতে পুলিশ মালেকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শনিবার সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্থান্তর করা হলে ওইদিন বিকেলে মালেকের নিজ গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।
ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত। প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা মনে করা হলেও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এটি হত্যা বলে দাবি করা হয়। আর এর প্রেক্ষিতে ঘটনার তিনদিন পর থানায় দু’টি মামলা দায়ের হয়।
নিহতের ছোটভাই আবুল কাশেম জানান, গত ১২ এপ্রিল বিকেলে একই গ্রামের শরীফ ড্রাইবারের ছেলে বদি, জয়নাল পাঠানের ছেলে জালাল ও সাহেব আলীর ছেলে মারফত আলী তার ভাইকে বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করায়।
সেখানে তাকে তিনজন মিলে নিয়ে গেলেও বদি হঠাৎ ঘটনাস্থল থেকে উধাও হয়ে যায়। এতে মালেকের সন্দেহ হলে তিনি দৌড়ে বাড়ি আসেন এবং তার ঘরে প্রবেশ করে স্ত্রী রানু বেগমকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় বদি দৌড়ে পালিয়ে যায়। স্বামীকে ধর্ষণ চেষ্টার কথা বললেও উত্তেজিত মালেক স্ত্রীকে মারধর করেন।
পরে তার শ্বশুর চাঁন মিয়া বাদী হয়ে মালেকের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন। সে অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকেলে থানা পুলিশ মালেকের বাড়ি যায়। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সরোয়ার হোসেন খোকনকে মিমাংসার দায়িত্ব দিয়ে থানা পুলিশ চলে আসে। সন্ধ্যায় উপরোক্ত আসামিরাসহ বদির ভাই লুৎফুর মিলে মালেককে মারধর করে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর রাতেই তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়।
তিনি আরো জানান, এ ঘটনা থামাচাপা দিতেই তারা পরিকল্পিতভাবে মালেককে হত্যা করেছে। ঘটনার সময় মালেকের ঘরের দরজা খোলা ছিল। কেউ ঘরের ভেতরে আত্মহত্যা করলে ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার কথা। ভাই হত্যার বিচার চেয়ে শনিবার সকালে তিনি কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আর তার ভিত্তিতে ৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনার একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও নারী ও শিশু অধিকার আইনে ধর্ষণ চেষ্টার একটি মামলা দায়ের করেছে রানু বেগম।
কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত জানান, নিহতের স্ত্রী রানু বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ঘটনার দিন বদি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে এবং ওই ঘটনা মালেককে জানালে তার স্বামীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। আর এ কারণে দু’টি মামলাই নেয়া হয়েছে। পরে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।