বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে কার্গো পরিবহনে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বারবার তাগাদা দিলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফলে গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে বিষয়টি। বেবিচক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান রেডলাইন অ্যাসিউরড নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পর নিরাপত্তার উন্নয়নের বিষয়টি পরিদর্শন করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে বিবেচনার কথা বললেও তা মানছে না যুক্তরাজ্য সরকার।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, গত এক বছরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সকল দিক ও বিভাগ, বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি ঘটেছে। এমতাবস্থায় কিছুদিন আগেও যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। কিন্তু কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি সুরাহা হচ্ছে না।
সূত্রে জানা গেছে, রেডলাইনের পরামর্শে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বেশকিছু যন্ত্র কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখা ভারি ব্যাগ তল্লাশিতে আটটি ডুয়াল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ডব্যাগ তল্লাশির জন্য ১৪টি ডুয়াল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, ছয়টি লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), নয়টি আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস), চারটি ফ্যাপ ব্যারিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, পাঁচটি ব্যারিয়ার গেট উইথ আরএফ আইডি কার্ড রিডার, দুটি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) এবং চারটি এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) যন্ত্র।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এসব যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ্য, শাহজালালে ত্রুটিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিমানবন্দরের সকল দিক ও বিভাগে যোগ্য জনবল না থাকার অভিযোগ তুলে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো পরিবহন স্থগিত করে যুক্তরাজ্য। ওই বছরের ২১ মার্চ পরামর্শ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং জনবল প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান রেডলাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
দুই বছর মেয়াদি চুক্তির এক বছর পেরিয়ে গেলেও যুক্তরাজ্যের আরোপিত সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। গত বছরের ১৬ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন করেন ব্রিটিশ প্রতিনিধিদল। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদলটি জানায়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষত কার্গো ভিলেজ থেকে উড়োজাহাজে পণ্য উঠানোর পর্যায়টি এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। পাশাপাশি কার্গো পরিবহনে দ্রুত প্যালেট সংযোজনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তারা উল্লেখ করেন।
প্রতিনিধিদলটি রেডলাইনের মাধ্যমে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টির প্রশংসা করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না বলেও জানায় তারা।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, ১৬ নভেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদল যেসব মন্তব্য করেন সেগুলো বিবেচনা করে কার্গো ভিলেজে মোট ১৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। চালু করা হয়েছে সেমি অটোমেশন পদ্ধতি।
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় স্পেস বাড়ানোর জন্যে ৬৯ দশমিক ৮ মেট্রিক টন পঁচা মালামাল ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া বিমানের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদারের উদ্দেশে জনবল বাড়ানো হয়েছে।