ধ্বংসস্তূপে কিছু পাওয়ার আশায়…

ধ্বংসস্তূপে কিছু পাওয়ার আশায়…

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে রাজধানীর গুলশান ও বনানীর মাঝে গড়ে ওঠা কড়াইল বস্তি। পুড়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি, দোকান-পাট ও আসবাবপত্র। আগুনে প্রায় সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও এরই মধ্যে অবশিষ্ট কিছু পাওয়া যায় কিনা- তা খুঁজে ফিরছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

বুধবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে সৃষ্ট আগুনে বস্তিটির বৌ-বাজার থেকে বাদলের ঘাট পর্যন্ত গড়ে তোলা প্রায় হাজার খানেক বাড়ি-ঘর ও দোকান পুড়ে যায়।

এ নিয়ে গত এক বছরের মধ্যে কড়াইল বস্তিতে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো বলে জানান স্থানীয়রা। তবে আগের দু’বারে বস্তিতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবারের ক্ষতি তার দ্বিগুণেরও বেশি বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।

বৃহস্পতিবার সকালে আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া কড়াইল বস্তি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব ঘর-বাড়ি ও দোকান পুড়েছে তার সবগুলোই ইট অথবা টিনের দেওয়ালের তৈরি। আর ছাদ তৈরি টিন দিয়ে। অগ্নিকাণ্ডে ঘর ও দোকানগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে মাটির ওপরে পড়ে আছে। দোকানের পণ্যগুলো পুড়ে ছাই-কয়লায় পরিণত হয়েছে। চাল, ডাল পুড়ে স্তূপ হয়ে আছে। তবুও ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী ওই ধ্বংসস্তূপ থেকেই তাদের বিভিন্ন মালামাল খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত শেরপুরের রুপালী বেগম জানান, তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে রয়েছেন। আগেও দু’বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে ওই সময় তার তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এবার আর রক্ষা হয়নি। ঘরে থাকা সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

‘ভাই কি বলবো। আমার আর কিছুই নাই। সব শেষ হয়ে গেছে। কাঁথা-বালিশ, চাল, নুন কোনো কিছুই আর নেই। কোনরকম ছেলে আর আমি জীবন নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। এমন সর্বনাশা আগুন আমার জীবনে কখনো দেখিনি’- বলছিলেন আগুনে ঘর হারানো রুপালী বেগম।

ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বাসিন্দা মো. ইসমাইল। তিনি প্রায় ৮ বছর ধরে দুই সন্তান ও পরিবার নিয়ে কড়াইল বস্তিতে বাস করছেন। ইসমালই জানান, এবারের আগুনে বস্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগের আগুনে তিন থেকে চারশ ঘরবাড়ি পুড়লেও এবার অন্তত হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে।

তবে তার অভিযোগ, বস্তিতে আগুন ইচ্ছাকৃতভবে লাগানো হয়েছে। এর পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে। যে কারণে বার বার আগুন লাগলেও এর কোনো বিচার হয় না।

মো. আরিফ নামের এক বস্তিবাসী বলেন, শুনছি বাদলের ঘাট অঞ্চল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মাইকে আগুনের খবর শুনে সবাইকে নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। তবে ভাগ্যক্রমে আগুন আমাদের ঘর পর্যন্ত আসেনি। কিন্তু বাদলের ঘাট থেকে বৌ-বাজার পর্যন্ত সব পুড়ে গেছে। আগেরবার আগুনে যা পুড়েছে, এবার তার দুই গুণেরও বেশি পুড়েছে।

বুধবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট গিয়ে তা নেভাতে কাজ শুরু করে। পরে আরও ৬টি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ২০টি ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় ৫ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৪শ’ ঘর পুড়ে যায়।

এরও আগে, একই বছরের ১৪ মার্চ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় অর্ধশত ঘর পুড়ে যায়। প্রায় দেড়শ একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে কড়াইল বস্তি। এই বিশাল বস্তিতে কয়েক লাখ মানুষ বসবাস।

অন্যান্য