মিসরের রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ারে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে চলমান বিক্ষোভ সোমবার আরও সহিংস রূপ নিয়েছে।
এদিন সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।
গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ও সহিংসতায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। কায়রোর হাসপাতাল মর্গ এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।
এর আগে মিশরের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২২ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১২৫০ জন বেসামরিক মানুষ।
এদিকে মিশরের সামরিক বাহিনী এবং সেনাসমর্থিত মন্ত্রিসভা সোমবার জরুরি বৈঠকে বসেছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে চলমান সহিংসতা এবং আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
মন্ত্রিসভার মুখপাত্র মোহাম্মদ হেগাজি বলেছেন, ‘বৈঠকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, তাহরিরর স্কয়ার সংঘর্ষের পরবর্তী অবস্থা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা করার হবে।’
তাহরির স্কয়ার মিশরের হোসনি মোবারক সরকার বিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল ছিল। মোবারকের পতনের পর দ্রুত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেনাবাহিনী দেশটির শাসনভার নেয়। কিন্তু তারা বিলম্ব করার কারণে এখন প্রতিশ্রুতির রক্ষা পথে হাঁটছে বলে আস্থা পাচ্ছেন না জনগণ।
এর কারণে এর আগেও কয়েকবার ছোটখাট বিক্ষোভ হয়েছে। তবে গত শনিবার থেকে সাধারণ জনগণ সামরিক বাহিনীর কতৃত্ব অবসানে এবং বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণের দাবিতে আবার তাহরির স্কয়ারে জড়ো হয়েছে।
এদিন হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকলে সেনাবাহিনীর মদদ পুষ্ট নিরাপত্তা বাহিনী দমনমূলক আচরণ করে। তারা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস এবং ব্যাটন ব্যবহার করে । রাবার বুলেট এবং শটর্গানের গুলিও করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এদিকে রোববার দিবাগত রাতে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের তাহরির স্কয়ার থেকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তারা বিক্ষোভকারীদের ব্যানার এবং রাত্রি যাপনের জন্য ব্যবহৃত তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ঘটনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, সামরিক শাসকেরা একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা করছে।
এর আগে গত রোববার দেশটির নিরাপত্তা রক্ষীরা তাহরির স্কয়ার থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে কঠোর অবস্থান নেয়।
এসময় বিক্ষাভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলেও এক ঘণ্টার মধ্যেই আবারও তাহরির স্কয়ারের দখল নেয় বিক্ষোভকারীরা।
রোববার রাতভর তাহরির স্কয়ার এলাকায় সংঘর্ষ চলে। এসময় হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো আহত রোগিতে ভর্তি হয়ে যায়।
সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে গেলো।