প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ২২ কোটি ৩০ লাখ ১০ হাজার বই আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যেক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি উৎসবের আমেজে বিনামূল্যে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে বই বিতরণের ৭৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
এবারের শিক্ষাবর্ষে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে তিনটি বিষয়ের বই দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে পুরনো পাঠ্যবইগুলোতেও। নতুন শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষার্থীদের আধুনিক, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যুগোপযোগী কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পাঠ্য বইয়ে এ পরিবর্তন ও পরিমার্জন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাঠ্য পুস্তক বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রথমবারের মত এবার নতুন করে ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বাংলা’, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ এবং শুধু ৬ষ্ঠ শ্রেণীর জন্য ‘আইসিটি-তথ্যপ্রযুক্তি’ বিষয়ে বই প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে আইসিটি-তথ্যপ্রযুক্তি বইটি ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর জন্যও প্রণয়ন করা হবে।
বেশকিছু দেশীয় নামী-দামী প্রেসের পাশাপাশি পাঠ্যবইগুলো ছাপা হয়েছে ভারতের তিনটি প্রেস থেকেও। প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় তিনভাগের এক ভাগ বই ছাপা হয়েছে ভারতের পিতাম্বুরা, গোপসন এবং ভি কে উদ্যোগ প্রেস থেকে।
১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলো ছাপা হলেও ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর বইগুলো সাদাকালোয় ছাপা।
এনসিটিবি’র সদস্য অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল বাংলানিউজকে জানান, ‘আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে অনেক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘৩০ নভেম্বরের মধ্যে আমরা প্রত্যেক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে বই পৌঁছে দেব। পরে তারা স্কুলগুলোতে বই পাঠাবেন। ১ জানুয়ারি সারাদেশে বই উৎসবের মাধ্যমে স্কুল থেকে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝেঞ বইগুলো বিতরণ করা হবে।’
তবে বেসরকারি পর্যায়ে কয়েকটি বই ছাত্রছাত্রীদের ক্রয় করে নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রচলিত কারিকুলামের ত্রুটি-বিচ্যুতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ ও প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে এবারের পাঠ্যবইগুলো সংশোধন করে পরিবর্তন, পরিমার্জন করা হয়েছে।
বিশেষ করে পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, শিশু শ্রম, যৌতুক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, বাংলা দ্রুত পঠন, ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন, ইংলিশ র্যাপিড রিডারসহ বিভিন্ন বিষয়ের সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
এছাড়া ধর্মশিক্ষাকে শুধু ধর্মশিক্ষা নাম না দিয়ে নতুন করে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামকরণ করে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্মের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও এনসিটিবি কর্মকর্তা ড. উত্তম কুমার দাস বাংলানিউজকে জানান, অনেক বিচক্ষণতার সাথে কারিকুলামে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয়েছে। কোথাও কোন বিষয় বা থিমের ওভারলেপিং হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-শিক্ষক কাউকেই সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে কোন জটিলতায় পড়তে হবে না। ছোট ছোট খ-ে প্রতিটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের হাতে কারিকুলাম থাকবে। কারিকুলামে রাইটার্স ইনস্ট্রাকশন দেওয়া থাকবে যাতে করে শিক্ষকরা খুব সহজে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারেন।’
এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক তাহেরা আখতার জাহান বাংলানিউজকে বলেন, এবারের কারিকুলামে কোন প্রকারের অগ্রহণযোগ্যতার অবকাশ নাই। প্রতিটি বিষয়ের উপর ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন কমিটি কাজ করছে। বই হবে পাঠ ভিত্তিক। এই বইয়ের পর কোচিং-গাইড ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম আর থাকবে না।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঝরে পড়া শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রত্যেক শিশুকে স্কুলে আনতে সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করছে। এরই মধ্যে সব কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি হবে বই উৎসবের দিন। এদিন সব ছাত্রছাত্রীর হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।