‘কবিতা মানে না বর্বরতা’ স্লোগান নিয়ে দু’দিনব্যাপী ৩১তম ‘জাতীয় কবিতা উৎসব ২০১৭’ শুরু হয়েছে।
বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরে উৎসব উদ্বোধক কবি বেলাল চৌধুরীর পক্ষে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
পরিষদের সভাপতি কবি ড. মোহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি আসাদ চৌধুরী। আরো বক্তৃতা করেন জাতীয় কবিতা উৎসব ২০১৭ আয়োজন কমিটির আহবায়ক কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন ও পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত। গত ১ বছরে দেশ-বিদেশে মৃত্যুবরণকারী গুণী ও বরেণ্যব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কবি আমিনুর রহমান সুলতান।
এবারের ৩১তম এ কবিতা উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হক, কবি শহীদ কাদরী ও কবি রফিক আজাদ স্মরণে।
কবি বেলাল চৌধুরীর লিখিত বক্তৃতা পাঠে হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানান, কবিতা হচ্ছে মানুষের অর্ন্তগত ও অর্ন্তনিহিত মাতৃভাষা। সময়ের অনুকূল ও প্রতিকূলে এ কবিতা সর্বদাই সত্যনিষ্ঠ।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সময়ে কবিতাই নির্মমতা, বর্বরতা ও অস্ত্র-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আলোর পথযাত্রীদের হাত ধরে এগিয়ে গিয়েছে, সত্যের জয়কে ত্বরান্বিত করেছে। ভবিষ্যতেও করবে।
তিনি বলেন, তবে বর্তমান বিশ্বে ক্ষমতা ও শক্তির বেপরোয়া দাপট বর্বরতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। রাজনীতি অবশ্যই সর্বোচ্চ সমাজসেবা, দেশসেবাও বটে। তারপরও ক্ষমতা ও শক্তির এ বেপরোয়া দাপট রুখতে না পারলে মানবতা পুনরায় বিপন্ন হবে। তিনি তাই বিশ্বমানবতাকে ও কবি-সাহিত্যেকদের হাত গুটিয়ে বসে না থেকে সক্রিয় হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
কবি রবিউল হুসাইন বলেন, মানুষের জন্য মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা জানায় কবিতা, আবার মানুষের বর্বরতার রিুদ্ধেও দাঁড়ায় কবিতা। কারণ কবিতার জীবন সব সময় সত্য ও ন্যায়ের ভেতরে প্রতিপালিত।
কবি ড. মোহাম্মদ সামাদ বলেন, সকল শিল্পের দাবি একটাই- অসত্য, অন্যায়, কুপমন্ডুকতা, কলুষতা ও অমঙ্গলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সুন্দরের আবাহন। তিনি বলেন, সুন্দরকে পেতে হলে কৃষিখামার, কল-কারখানা, অবকাঠামো ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের পাশাপাশি কবিতা, সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, নাটক, নৃত্য ও চিত্রকলাসহ অন্যান্য শিল্প-মাধ্যমের চর্চাক্ষেত্র প্রসারিত অপরিহার্য। আজকের দিনে এই আমাদের প্রার্থনা।
অনুষ্ঠানে বিদেশী কবি-সাহিত্যিক-গবেষকদের মধ্যে ভারতের কলকাতা থেকে আশিস সান্যাল, চিন্ময় গুহ, বীথি চট্টপাধ্যায়, কাজল চক্রবর্তী ও আবৃত্তিকার স্বপ্না দে, ত্রিপুরা থেকে রাতুল দেব ও দিলীপ দাস, সুইডেন থেকে ক্রিস্টিয়ান কার্লসন, রাশিয়া থেকে ড. আলেক্সানড্রোভিচ পোগাদাইভ, অস্ট্রিয়া থেকে মেনফ্রেড কোবো, আর্জেন্টিনা থেকে ইওনা বুরর্ঘাট, জার্মনি থেকে টোবিয়াস বুরর্ঘাট এবং পুয়ের্তোরিকো থেকে আগত লুস মারিয়া লোপেজ ও মারিয়া ডি লোস অ্যানজেলেস কামাকো রিভাস উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে পরিষদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
উৎসব শুরুর আগে কবিতা পরিষদের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অপর্ণ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং একুশের গান ও উৎসব সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
উদ্বোধনী পর্বের পরে ‘কবিতা মানে না বর্বরতা (Poetry against savagery)’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। মূল অলোচক ছিলেন চিন্ময় গুহ। এছাড়া বাংলাদেশ ও আগত বিদেশী কবি-সাহিত্যিকরা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন।
১০ পর্বে বিভক্ত দু’দিনব্যাপী এ কবিতা উৎসব আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে।