টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের রসিকতা, ‘আচ্ছা উইকেট কোনটা? আশপাশের পুরো জায়গাটাই তো সবুজ। এর মাঝে কোন পিচে খেলা আমিতো খুঁজে পাচ্ছি না।’ শুধু রসিকতা ভাবার কোনই কারণ নেই। আজ দুপুর পর্যন্ত সত্যিই উইকেট খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। কারণ আশেপাশে যতগুলো উইকেট আছে, তার সবটাই ঘন সবুজে ঢাকা। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিকাল অবধি কিছু ঘাস ছেটে ফেলা হয়েছে। হয়তো আগামীকালও আরেকবার ঘাস কাটার যন্ত্র ব্যবহার হবে। তা হলেও যা থাকবে, সেটাই অনেক। যা হতে পারে ফাস্ট বোলারদের স্বর্গ আর ব্যাটসম্যানদের মাথা ব্যথার কারণ।
কোনটা হবে? সবুজ ঘাসের উইকেটে ফাস্ট বোলারদের রুদ্র মূর্তি? প্রচণ্ড গতি, বাউন্স আর সুইংয়ে ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল অবস্থা হবে? নাকি উল্টো ব্যাটসম্যানরা শাসন করবেন বোলারদের ?এর কোন চিত্র দেখা মিলবে? তা জানতে আগামী ক`টা দিন অপেক্ষায় থাকতেই হচ্ছে। তবে এটা সত্যি ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ ফাস্ট বোলিং বান্ধবই থাকবে। এখন কোন দলের দ্রুত গতির বোলাররা তা কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের টুটি চেপে ধরবেন সেটাই দেখার।
কাগজে কলমে কিউই ফাস্ট বোলাররা অনেক অভিজ্ঞ। অনেক পরিণত। সে তুলনায় বাংলাদেশর পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট নেহায়েত অনভিজ্ঞ। অপরিণত। তিন কিউই ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট (৪৭ টেস্ট ১৭৩ উইকেট), টিম সাউদি (৫৪ টেস্টে ১৯০ উইকেট ) ও নেইল ওয়েগনার (২৭ টেস্টে ১০৮ উইকেট) মিলে খেলেছেন ১২৮ টেষ্ট।
সেখানে বাংলাদেশের পেস বহরে যে চারজন আছেন, সেই রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও শুভাশীষ রায় মিলে খেলেছেন মোটে ২৯ টেস্ট। এর মধ্যে তাসকিন আর শুভাশীষ এখনো কোন টেস্টই খেলেননি। রুবেলের ঝুলিতে আছে ২৩ টেস্ট আর কামরুল ইসলাম রাব্বি খেলেছেন মোটে দুটি ম্যাচ । তুলনার প্রশ্নই আসে না। শুধু টেস্ট কম খেলাই নয়। বাংলাদেশের পেসাররা ফাস্টক্লাস ম্যাচ তথা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলেছেন অনেক কম। তারচেয়ে বড় কথা টাইগার পেসারদের বয়সও কম। কাজেই কাগজে কলমে সব হিসাব নিকাশই বাংলাদেশের বিপক্ষে।
অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকও মানছেন কিউই ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ নেহায়েত অপরিণত। অপরিপক্ক ও অনভিজ্ঞ। তাতে উইকেটে যতই ঘাস থাকুক, আর কন্ডিশন যতই পেস সহায় হোক না কেন! এরকম আনকোরা ফাস্ট বোলিং আক্রমণ নিয়ে মুশফিক বাহিনি কতটা কুলিয়ে উঠতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশের চিন্তা এখন দুটি ‘এক সবুজ ঘাসের উইকেট’। আর একঝাঁক তরুণ, আনকোরা, নবীন ও অনভিজ্ঞ ফাস্ট বোলারে গড়া পেস আক্রমণ । এই নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুশফিকের দল কতটা লড়াই করতে পারবে? আদৌ ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের কোন চ্যালেঞ্জ ছোড়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে রাজ্যের সংশয়।
তবে যাদের নিয়ে অত সংশয়, দুশ্চিন্তা, সেই পেস ডিপার্টমেন্টের অন্যতম সদস্য তাসকিন আহমেদ কিন্তু নিজেদের মোটেই দুর্বল, আনকোরা ভাবতে নারাজ। টেস্ট অভিষেকের হাতছানি যার সামনে, সেই দ্রুত গতির বোলার তাসকিনের স্থির বিশ্বাস, বাংলাদেশের পেস বোলিং কিন্তু মোটেই দুর্বল, কমজোরি ও জীর্ণ নয়। আজ বেসিন রিজার্ভের কনফারেন্স হলে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে তাসকিন জানান দিলেন, তারাও পিছিয়ে নেই। তাদের খাটো করে দেখাও ঠিক হবে না।
তার সোজা সাপ্টা কথা, ‘আমাদের পেস আক্রমণও কিন্তু ফেলনা নয়। সবুজ পিচ দেখে আমাদের ফাস্ট বোলাররাও পুলকিত। রোমাঞ্চিত। আমাদেরও ভালো মানের ফাস্ট বোলার আছে। যাদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকলেও মেধায় ঘাটতি নেই। আমাদের যা সামর্থ্য আছে, তার যদি যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে পারি, তাহলে যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।’
কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজ বিশ্রামে। যার বলে সুইং বেশি, সেই শফিউলও ইনজুরিতে। তারপরও যে কজন আছেন, এর মধ্যে রুবেল, তাসকিন ও শুভাশীষ দ্রুত গতিতে বল ছোড়ায় হয়তো তেমন পিছিয়ে থাকবেন না। তিনজনেরই সামর্থ্য আছে গড়পড়তা ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে বল করার। আর ঘাসের উইকেটে বল এমনিকেই সুইং করে, ওয়েলিংটন তো বাতাসেরই শহর। এখানে এমনিতেই যে বাতাস বয়, তাতে এমনিতেই বল এক আধ ইঞ্চি সুইং করে। কাজেই বাংলাদেশের পেসাররাও হয়তো খুব পিছিয়ে থাকবে না।
কিন্তু একটা অন্তরালের কথা ভাবা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবল ধোলাই হবার পর বাংলাদেশের মনোবলে চির ধরা স্বাভাবিক। তাই মানসিকভাবে মুশফিক বাহিনি হয়তো খানিক হতোদ্যম থাকবে। সেই নাকাল হবার বিব্রতকর অবস্থা সামলে আর মানসিক দুর্বলতা নিয়ে বাংলাদেশ আদৌ ভালো করতে পারবে কি না, অন্ধ বাংলাদেশ সমর্থকের মনেও যে সংশয়।
তাইতো প্রেস মিটেও প্রশ্ন উঠল। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হবার পরও কি দলের সে মানসিকতা আছে? মনে কি সেই জোর আছে, যা দিয়ে কিউইদের ঘায়েল করার শক্তি আসবে? দলের মানসিক অবস্থা এখন কেমন ? তাসকিনের আশা ছড়ানো জবাব, আমার মনে হয় আমাদের মানসিক অবস্থা ভালোই আছে। আমরা মনোবল হারাইনি। হতাশ ও হতোদ্যমও হয়নি। কেন হবো? আসলে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সব ম্যাচ হারাকে যতটা নেতিবাচক চোখে দেখা হচ্ছে বিষয়টা তেমন না দেখাই যুক্তিযুক্ত। নিউজিল্যান্ড এমন এক দেশ, যেভানে খেলতে এসে অনেক বড় বড় দলের ঘাম ছুটে যায়। এ কন্ডিশনে কিউইদের সাথে অনেক দলই খাবি খায়। উপমহাদেশের দলগুলো রিতিমত পর্যদুস্ত হয়।