রক্তাক্ত উর্মির মরদেহ নিয়ে যখন হাসপাতালে ছুটছিলেন তখন সবার সন্দেহ ছিল স্বামী আজগর আলীকে কেন্দ্র করে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর হত্যার দায়ে সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার করা হয় স্বামী আজগরকে। কিন্তু ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের তদন্তে হিমশিম খায় থানা পুলিশ।
তবে ছায়া ডিবি দক্ষিণ বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। একটি কানের দুলকে কেন্দ্র করেই হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়।
হত্যাকারী হিসেবে আজগর আলীর ভাতিজা মাসুদ রানাকে গত রাতে বংশাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও নিহত উর্মির ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
ডিবি (দক্ষিণ) পুলিশ জানিয়েছে, গত ৫ নভেম্বর বংশালের সুরিটোলার নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন উর্মি। বংশাল থানা পুলিশ ঘটনার তদন্তে কোনো ক্লু পায়নি। কে হত্যা করতে পারে উর্মিকে? তবে একটি মোবাইল ট্র্যাক করে মূল হোতাকে গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নিয়েছে পুলিশ।
রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, গত ৫ নভেম্বর মাসুদ রানা তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন। কিন্তু কানের দুলের বায়না ধরে স্ত্রী। কানের দুলের সন্ধানে চাচি উর্মির কাছে যায় ভাতিজা মাসুদ রানা। কিন্তু চাচার অনুমতি ছাড়া কানের দুল দেবে না বলে জানালে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় মাসুদ। চাচি চড় মারলে ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুদও ফল কাটার ছুরি দিয়ে চাচিকে মারার চেষ্টা করে। চাচী ক্ষিপ্ত হয়ে রান্না ঘর থেকে বটি নিয়ে তেড়ে আসে। এসময় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে বাথরুমে উর্মি আশ্রয় নিলে মাসুদ বাথরুমের দরজা ভেঙে বটি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে চাচিকে।
এরপর মাসুদ রক্তাক্ত পোশাক খুলে চাচার পোশাক পরে নির্বিঘ্নে পালিয়ে একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়। এরপর দীর্ঘ সময় ক্লুলেস ঘটনায় একাধিকবার স্বামী আজগরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
এরপর নিহত উর্মির ব্যবহৃত মোবাইলটি ট্র্যাক করে পুলিশ। জুয়াড়িদের কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধারের পর জানা যায়, মাসুদ রানার জুয়া খেলার নেশা ছিল। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে মোবাইলটি বিক্রি করেছিল। এরপরই মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আজ আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানান আব্দুল বাতেন।