বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসাকে রফতানি শিল্পের মতো একই হারে ঋণ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে এ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মূদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হারে সরকারি সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে বলেও জানিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী এ প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, এ ধরনের একটি চিঠি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেয়েছেন। এখন যাচাই বাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসাকে রফতানি শিল্পের মতো একই হারে ঋণ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ১৯৯৪ সালের ২২ আগস্ট জারিকৃত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিল্পনীতি ১৯৯১ এর ১ নম্বর অনুচ্ছেদের (ছ) উপ-অনুচ্ছেদে ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং একাদশ অধ্যায়ে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসাকে রফতানি শিল্পের অনুরুপ সুবিধা প্রদান করা হবে’ মর্মে উল্লেখ রয়েছে।
তবে জাতীয় শিল্পনীতি, ২০১৬ এর পরিশিষ্ট ৩ এর তালিকা অনুসারে ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসা’ সেবা শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। এ খাতে রফতানি শিল্পের অনুরুপ সুবিধা প্রদানের বিষয়ে বিদ্যমান শিল্পনীতিতে কোন নির্দেশনা লক্ষ্য করা যায় না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রফতানিকারকদের স্বল্প সুদে অর্থায়নের সুবিধা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (ইডিএফ) নামে একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু রয়েছে। এ তহবিল থেকে পুনঃঅর্থায়নের সুদের হার লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফার রেট) এর সঙ্গে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। যেকোন পণ্য রফতানিকারি প্রতিষ্ঠান ইডিএফ এর আওতায় তার ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মূদ্রায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা (উৎপাদন উপকরনাদী আমদানি বাবদ) গ্রহণ করতে পারে। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসা কোনো পণ্য উৎপাদন না করায় এর সঙ্গে ইডিএফ এর সঙ্গে কোন সংশ্লিষ্টতা লক্ষ্য করা যায় না।
বিদ্যমান বাজারভিত্তিক সুদহার নীতিমালার আওতায় ব্যাংকগুলো চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে আমানত ও ঋণে সুদহার নির্ধারণ করছে। তবে বর্তমানে শুধুমাত্র প্রি-শিপমেন্ট রফতানি ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদহার নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া রফতানি ঋণের সুদ হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সুবিধা নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কনটেইনার শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রস্তাব করেছে যে, তারা মূলত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও বন্দরে পরিবহন করে থাকে। তাছাড়া কিছু কিছু জাহাজ পানগাঁও বন্দর থেকে ভারতের চেন্নায় ও কলকাতায় পণ্য পরিবহন করে এবং বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করে। যদিও তারা কোনো উৎপাদন ও রফতানি করে না কিন্তু রফতানি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করে। এ প্রেক্ষিতে তাদেরকে সুবিধাদি প্রদান করা যেতে পারে।
জাতীয় শিল্পনীতি, ২০১৬ এর আওতায় ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসা’কে রফতানি শিল্পের অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে। জাতীয় শিল্পনীতি, ২০১৬ এর সংশোধনীর মাধ্যমে ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসা’কে রফতানি শিল্পের আওতাভুক্ত করা গেলে বাংলাদেশ কনটেইনার শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও অন্যান্য রফতানিকারকদের ন্যায় সুবিধা পেতে পারে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মূদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হারে সরকারি সহায়তা প্রদান করা যেতেও পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।