যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় বিশ্বের নানা জনগোষ্ঠির মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তবে ট্রাম্পের জয়ে যারা আনন্দিত তাদের মধ্যে একটি জনগোষ্ঠী রাশিয়ার কোসাকরা। এদের কাছে ট্রাম্প বেশ জনপ্রিয়। খবর বিবিসির।
তবে শুধু এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যেই নয় রাশিয়াজুড়েই চলছে ট্রাম্পের গুণগান। রাশিয়ায় ট্রাম্পের এই বিপুল জনপ্রিয়তার অবশ্য বেশ কিছু কারণও আছে।
কোসাকরা পরিচিত সাহসী যোদ্ধা হিসেবে এবং পশ্চিমাদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সন্দেহপ্রবণ। তবে একজন পশ্চিমাকে তারা এখন ব্যতিক্রমী দৃষ্টিতে দেখছে আর তিনি হলেন ধনকুবের ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কাসিমোভার কোসাকরা ট্রাম্পকে একজন সম্মানসূচক কোসাক হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাকে সেখানে সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ট্রাম্প অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মতো নয়। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান। তিনি নেটোকে অর্থ সাহায্য দিতে চান না এবং তার একজন সুন্দরী স্লাভিক স্ত্রীও আছে। এমনটাই জানিয়েছে কোসাক গোত্র প্রধান আন্দ্রে পালিকভ।
তবে রাশিয়ায় শুধু কোসাকরাই যে ট্রাম্পের গুণগান গাইছেন তা নয়। রুশ টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানকার একজন কৃষক তার এক ইয়াক শাবকের নাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে। বলা হচ্ছে, শিশু ডোনাল্ড বেশ অবাধ্য প্রকৃতির।
রুশ শিল্পীরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি আঁকছেন, রুশ রাজনীতিবিদরা তাকে অনুকরণ করছেন এবং মস্কোতে এখন সোনার প্রলেপ দেয়া স্মার্টফোন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে যার কভারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখাবয়ব বসানো।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, কিছুদিন আগেও সিরিয়া এবং ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন একটি শীতল যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছিলো। কিন্তু এখন রাশিয়া হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে দেখছে। আর এর পেছনেও রয়েছেন ট্রাম্প।
রুশ সিনেটর অ্যালেক্সি পুশকভ বলছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের একটা সুযোগ আছে। ট্রাম্প ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করা এবং একটি সমঝোতায় আসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমার মনে হয় না যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা ভালোবাসা কিংবা উপহার আশা করতে পারি। তবে আমরা আশা করতে পারি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে আমরা কিছু সমঝোতায় আসতে পারবো।
নির্বাচনী প্রচারণার এক বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী। তিনি চান দুই দেশ মিলে আইএসকে ধ্বংস করতে।
রাশিয়ায় অনেকেই মনে করেন যে, তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ তুলে নেবেন এবং বাস্তবতাকে সামনে রেখে রাশিয়ার সঙ্গে একজোট হবেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার অনেকের কাছে ট্রাম্পের প্রতি মূল আকর্ষণ হচ্ছে তার বিশ্বায়নবিরোধী এবং রাজনৈতিক শুদ্ধিবিরোধী মনোভাব।
রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ডুগেট বলছেন, ‘ট্রাম্পের আমেরিকাই হচ্ছে সেই আমেরিকা যাকে আমি গ্রহণ করি, যাকে আমি সম্মান করি এবং যাকে সম্ভবত আমি প্রশংসাও করবো। এই আমেরিকা বিশ্বায়ন এবং উদারনীতির বিপক্ষে। উইড্রো উইলসন থেকে হিলারি ক্লিনটন পর্যন্ত ছিল অন্য আমেরিকা। সেই আমেরিকা বিশ্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মতো ভূমিকা রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন ট্রাম্পের আমেরিকা সম্ভবত পুতিনের রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মিত্র হতে যাচ্ছে।’
বহুদিন যাবত রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা অনেকটাই শীতল। তবে কোসাকরা এখন ভাবছে, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন সম্পর্কের অবসান হচ্ছে এবং বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হচ্ছে। সেই নতুন বিশ্বব্যবস্থার পুরোভাগেই থাকবে রাশিয়া।