পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রহিমা ফুড লিমিটেড। বছরের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৭ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ টাকায়। অর্থাৎ ১১ মাসের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ৫০ টাকা ৫৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ রকম অস্বাভাবাবিক দর বেড়েছে ৫০টিরও বেশি কোম্পানির। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। জবাবে এসব প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, দর বাড়ার কোনো রকম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই। অর্থাৎ কারণ ছাড়াই বেড়েছে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের চাহিদা থাকলে দর বাড়ে। তবে যদি কারসাজি করে বাড়ায় তখনই বিনিয়োগকারীরা লোকসানের মুখে পড়ে। মাঝে মধ্যে পুঁজিাবাজর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখে। আর এতে দর বাড়ার প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে। কিন্তু দর বাড়ার কারণ খুঁজে বের করতে বিএসইসি সব সময় আগ্রহ দেখায় না। এতে এক শ্রেণির অসাধু চক্র ফায়দা হাসিল করে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাই কোনো কোম্পানির দর বাড়তে থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জের নোটিশে সীমাবদ্ধ না থেকে কমিশনের তদন্ত করা উচিত। সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদেরও সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, জানুযারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : অলটেক্স লিমিটেড, আইটি কনসালটেন্ট, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, এমারেল্ড ওয়েল, বিডি ওয়েল্ডিং, আনোয়ার গ্যাভানাইজিং, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, আমান ফিড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, সিএমসি কামাল, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (বিএসআরএম), প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু স্টাফলার্স, জেমিনী সী ফুড, ঢাকা ডায়িং, রহিম টেক্সটাইল, বিডি অটোকারস, রহিমা ফুড, আজিজ পাইপ, ইস্টার্ন ক্যাবলস, দেশ গার্মেন্টস, ওরিয়ন ইনফিউশন, লিবরা ইনফিউশন, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মডার্ন ডায়িং, পেনিনসুলা হোটেল, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড, এপেক্স ফুটওয়্যার, জুট স্পিনার্স, ন্যাশনাল টিউবস, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, রেইনউইক যজ্ঞেশ্বর, নর্দান জুট, ইবনে সিনা, সোনালী আঁঁশ, এমবি ফার্মা, মেঘনা পিইটি, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, ইমাম বাটন, ফার্মা এইড, স্টাইল ক্র্যাফট, বিডি অটোকারস, জিএসপি ফাইন্যান্স, স্টান্ডার্ড সিরামিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (আইপিডিসি), অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। এসব প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়ার পরও বার বার তাদের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে মডার্ন ডায়িংকে সর্বোচ্চ ৪ বার, জেমিনী সী ফুডকে ৩ বার দর বাড়ার কারণ জানতে নোটিশ দেয় ডিএসই।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, কোনো কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বাড়লে ডিএসই প্রাথমিকভাবে দর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দেয়। কোম্পানিগুলো দর বাড়ার কারণ জানায়। তারপরও যদি কোনো কোম্পানির দর অস্বাভাবিক বাড়ে তখন ডিএসই প্রাথমিক তদন্ত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে জানায়। বিএসইসি তাদের আইন অনুযায়ী ওই সব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
এ সম্পর্কে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কোম্পানির শেয়ার দর বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে দর বাড়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা এবং কারসাজি চক্র জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ দর বাড়ছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বিনিয়োগের আগে পিই রেশিও, আর্থিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য দেখে নেয়া উচিত। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা সচেতন হতে হবে। তাহলে হঠাৎ কোনো কোম্পানির দর বাড়লেও তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
জানা গেছে, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ডরিন পাওয়ারের শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানটির দর বাড়ার কারণ জানতে কোনো ধরনের নোটিশ দেয়নি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার কারণ খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাছাড়া রহিমা ফুডের শেয়ার দর বাড়ার পেছনে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছিল কিনা তা নিয়েও একটি কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠান দু’টির দর বাড়ার কারণ খুঁজে বের করার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে অর্ধশতাধিক কোম্পানির দর বাড়ার কারণ সম্পর্কে কোনো ধরনের খোঁজ নিতে পারেনি বিএসইসি।
এ সম্পর্কে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অস্বাভাবিক দর বাড়লে ডিএসইর পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে নোটিশ দেওয়া হয়। তারপরও দর বাড়ার পেছনে কোনো ত্রুটি মনে হলে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে। তবে সময় ও জনবলের অভাবে ইচ্ছা থাকার পরও সব কোম্পানির দর বাড়ার কারণ তদন্ত করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানেও ডরিন পাওয়ার ও রহিমা ফুড নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। কোনো রকম ত্রুটি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।