নেই কোনো হরতাল, কিংবা অবরোধ-অরাজকতা। তবু গত কয়েকদিন যাবত এফডিসিতে ছবির শুটিং হচ্ছে না। বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরেও ছবি সংশ্লিষ্ট মানুষজনের দেখা মেলেনি। শুধু আট নম্বর ফ্লোরে চলছে এটিএন বাংলার জন্য নির্মিত একটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। এবং চার নম্বর ফ্লোরে এশিয়ান টিভির জন্য নির্মিত একটি অনুষ্ঠান শেষ হয় গত সোমবার রাতে। সেটির সেট ভাঙার পর পরিষ্কার করা হচ্ছে।
আর কড়ইতলায় নির্মাণ হচ্ছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির শুটিং সেট। এছাড়া গত সোমবার দিবাগত রাতে ‘অন্তর জ্বলা’ ছবির কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছে এফডিসির প্রবেশ পথে। তাও সেখানে উল্লেখ করার মতো কোনো শিল্পী ছিলেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এফডিসির এক সিনিয়র নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘প্রায় ১৭ বছর যাবত এখানে কাজ করছি। এমন চিত্র ঈদ কিংবা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু এমন সময়ে এফডিসিকে এতোটা নীরব দেখিনি। মনে হচ্ছে এখানে মরা মরছে। এত বড় জায়গা, এত মানুষের জায়গা- খালি পড়ে থাকলে কী ভালো লাগে!’
ক্যান্টিনে বসে পরিচালক সমিতির এক সদস্য পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বললেন, ‘এখন সবাই ডিজিটাল ফরম্যাটে কাজ করে। ক্যামেরা ও লাইট একসাথে প্যাকেজ হিসেবে পাওয়া যায় বলে সবাই এফডিসির বাইরেই বেশি কাজ করে।’
এদিকে, মিরপুর থেকে এফিডিসিতে শুটিং ও নায়ক-নায়িকা দেখেতে এসেছেন ফজলুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম নামে দুই বন্ধু। ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে তারা ঝালমুড়ি খাচ্ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘পুরা এফডিসি ঘুরলাম, কিন্তু কোথাও কোনো শুটিং হচ্ছে না। অথচ ভেতরে ঢোকার সময় গেটের দারোয়ান ভেতরে শাকিব-বুবলির নতুন ছবির শুটিং চলছে বলে দু’জনের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়েছেন। ভেতরে ঢুকে কিছুই পেলাম না। টাকাটাই জলে গেল।’
এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া জাগো নিউজে বলেন, ‘সাধারণত আউটডোরে শুটিং থাকলে এমন হয়। তাছাড়া বেশিরভাগ নির্মাতাই আজকাল এফডিসির বাইরে শুটিং করেন। বেশ কিছুদিন যাবত এ অবস্থা চলছে। মাঝেমধ্যে জহির রায়হান কালার ল্যাবে দু’একটি ছবির মহরত হচ্ছে। তখন জানতে পারছি যে নতুন ছবির কাজ শুরু হচ্ছে।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এফডিসিতে দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের চেয়ে বিজ্ঞাপন, নাটক বা টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানই বেশি হচ্ছে। সংস্থাটির নয়টি ফ্লোরের মধ্যে পাঁচটি ফ্লোরই কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ভাড়া নিয়ে রেখেছে। এরমধ্যে ৮ নম্বর ফ্লোরটির অঘোষিত মালিক হিসেবে রয়েছে এটিএন বাংলা!
এ বিষয়ে হিমাদ্রি বড়ুয়া বলেন, ‘গত বছরের আগস্ট থেকে ফ্লোর ভাড়া শতকরা ১০ ভাগ করে কমানো হয়েছে। এরপরও যদি নির্মাতারা এখানে আসতে না চান তাহলে এফডিসি চালাতে বাধ্য হয়েই ফ্লোরগুলো অন্য কোনো কাজে ভাড়া তো দিতেই হবে।’
আরো বলেন, ‘এফিডিসিকে অনেক খরচ বহন করতে হয়। সেইজন্য তাকে আয়ের ব্যবস্থাও করতে হয়। সবাই এফিডিসিকে পাশ কাটিয়ে চললে এফডিসি বেকার হয়ে পড়ে থাকবে। অব্যবহৃত থেকে এর জিনিসপত্র, ফ্লোর, সরঞ্জামাদি নষ্ট হবে। তাই বিভিন্ন চ্যানেলের কাছে ভাড়া দিয়ে সব সচল রাখার চেষ্টা।
যোগ করে তিনি বলেন, ‘তাছাড়া এফডিসিকে ঘিরে অনেকের রুটি-রোজগার হয়। চ্যানেল বা নাটক-বিজ্ঞাপনের শুটিং হলে তবু তারা কিছু কাজ করে দু’টো পয়সা পায়। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উচিত, এফডিসিতে শুটিং বাড়ানো।’
এদিকে এক সিনিয়র নির্মাতা জানালেন, ‘এখন মূল ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে গেছে। সবাই একটু গল্প প্রধান ছবি বানাতে ব্যস্ত। ওইসব ছবির গল্প হয়তো লোকেশন হিসেবে এফডিসিকে সমর্থন করে না। তাই এখানে কাজ কমে গেছে। তবে এফডিসিকে বেকার বলা চলে না। কিছুদিন বিরতি চললেও এখনো এখানে অনেক কাজ হয়। এফডিসিকে নতুন করে ঘষামাজা করা হচ্ছে। নতুন রুপে সাজছে। অনেক সরঞ্জাম আসছে। আশা করাই যায়, সামনে এখানে অনেক কাজ বাড়বে।’