বিপিএলের গত আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হার দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল নবাগত দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। তারপরই জয়ের পথ খুঁজে পাওয়া। টানা তিন ম্যাচ জয়। আর পরের ইতিহাস সবারই জানা। আগের দুইবার ঢাকাকে চ্যাম্পিয়ন করা ম্যাশরাফি, প্রথমবার দায়িত্ব নিয়েই কুমিল্লাকে এনে দেন শিরোপা।
কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত তিন ম্যাচে মাঠে নামলেও জয়ের দেখা নেই কুমিল্লার। এই জয়ের নাগাল না পাওয়ায় খানিক হতাশ কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফিও। হাজারো ইনজুরি ও না পাওয়ার গ্লানি যাকে এখন পর্যন্ত স্পর্শ করেনি সেই মাশরাফি রোববার খুলনার বিপক্ষে হারের পর হতাশার বদলে খানিক ক্ষুব্ধ।
রোববার রাতে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কারো না উল্লেখ না করে মাশরাফি বলেন, সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও দায়িত্ব নিয়ে খেলার আশা করছি। মাশরাফির ধারণা যে উইকেটে খেলা হয় হয়েছে, এই উইকেটে অনায়াসে ১৪৪ টপকে যাওয়া সম্ভব ছিল।
খুলনার বিপক্ষে দলের বোলারদের পারফর্মেন্সে খুশি মাশরাফি। ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৯২ রান করা খুলনাকে ১৪৪ এ আটকে ফেলতে বোলাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আর পাল্টা ব্যাটিংয়ে নেমে আমাদের শুরুটাও ভালো হয়েছিল। কিন্তু আমার দলের মূল তিন ব্যাটসম্যান ইমরুল, লিটন আর স্যামুয়েলস যদি একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলতো তাহলে অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছানো যেত।
এদিকে মাশরাফির হতাশ হবার আরও একটি কারণ হল তার দলের প্রিয় দুই ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও লিটন দাসের ফর্মহীনতা। লিটন দাস আসরের শুরু থেকেই ভালো খেলতে পারছন না। তারপরও মাশরাফি আগের ম্যাচ শেষে বলেছিলেন লিটনই আমার দলের সেরা ব্যাটসম্যান।
তবে জানা গেছে, লিটন দাসকে খেলানো নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ও দলের ম্যানেজমেন্টের মধ্যে একটা মত পার্থক্য রয়েছে। সেটা বিবাদের পর্যায়ে না গেলেও একাদশ সাজানো নিয়ে নিয়ে কুমিল্লা শিবিরে একটা মতভেদ তৈরি হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজির চাপ উপেক্ষা করে লিটনকে খেলানো এবং তার ক্রমাগত খারাপ ফর্মও মাশরাফির মনে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয় ম্যাচের ন্যায় এ ম্যাচেও লিটন দাসকে ওপেন থেকে সরিয়ে নিচে নামিয়ে খেলানোর পরিকল্পনা করেছিলেন মাশরাফির। এর জন্যই দলে নেওয়া হয়েছিল সৈকত আলিকে। তবে ফিল্ডিং করার সময় সৈকত ব্যথা পাওয়ায় অধিনায়কের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। আর ওপেন করতে নেমে বরাবরের মত আবারো ব্যর্থ হয় লিটন।
তার কন্যা নাফিসা কামাল ফ্র্যাঞ্চাইজি হলেও সবার জানা কুমিল্লার আসল স্বত্বাধিকারী হচ্ছেন বিসিবি, এসিসি ও আইসিসির সাবেক সভাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি কুমিল্লার প্রতিটি ম্যাচ দেখতে আসেন। রোববারও মাঠে বসে নিজের দলকে টানা তৃতীয় ম্যাচ হারতে দেখেন।
ম্যাচ শেষে খানিক হতাশ মুস্তফা কামাল শেরেবাংলার গ্রান্ড স্ট্যান্ডের খোলা আকাশের নিচে বসে দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলটের সঙ্গে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত একান্তে কথা বলেন। এসময় ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মুস্তফা কামালের চোখের নিচে ছিল খানিক হতাশার ছাপ। তবে তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে তা খালেদ মাসুদ না জানালেও জোড় গুঞ্জন দলের একাদশ নিয়ে অসন্তুষ্ট মুস্তফা কামাল, নাফিসা কামাল ও তার পরিবার।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মাঠে পারফর্মেন্সের পাশাপাশি একাদশ সাজানো নিয়েই ফ্র্যাঞ্চাইজি ও অধিনায়কের মধ্যে মূল মত পার্থক্য জন্ম নিয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি চাচ্ছেন ভালো পারফর্মেন্স ও জয়। এ নিয়ে আধিনায়ক মাশরাফি পড়েছেন বিপাকে। তার সাজানো একাদশের নির্ভরযোগ্য দুই তারকা ইমরুল কায়েস (তিন ম্যাচে ২৭) ও লিটন দাস (তিন ম্যাচে ২৫) চরমভাবে ব্যর্থ, আগের বিপিএল সেরা জাইদিও এখনো জ্বলে ওঠেনি। ফলে তার সাজানো কম্বিনেশনও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
এখন ফ্র্যাঞ্চাইজির কথা রাখবেন, নাকি নির্ভরযোগ্য পারফর্মারদের প্রতি আস্থা রাখবেন, এ নিয়ে মাশরাফি পড়েছেন উভয় সংকটে। তবে সব মতভেদ দূর করা সম্ভব যদি আজ ঢাকার বিপক্ষে মাশরাফির হাতিয়ারগুলো সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠে জয় তুলে আনতে পারে। তা না হলে এই মতভেদ যে কই গিয়ে ঠেকবে কে জানে।