দীর্ঘ চার বছর পর আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা রোববার শেষ হয়েছে।
এরই মধ্যে বিএমএ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি অনুসারী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। ড্যাব সরে দাঁড়ানোর ফলে পেশাদার চিকিৎসকদের এ নির্বাচন অনেকটাই আকর্ষণহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিএমএর নবীন-প্রবীণ চিকিৎসক সদস্যরা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএমএর এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুসারী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বাচিপ নেতারাই। জাসদসহ কিছু সংগঠন থেকে সভাপতি ও মহাসচিবসহ অন্যান্য পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হলেও তাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে থাকায় স্বাচিপ চিকিৎসকদের মধ্যেই আসল লড়াই হবে।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা না জানা গেলেও সভাপতি পদে স্বাচিপের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিএমএর একাধিকবারের মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তার বিপরীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ও বামপন্থী রাজনীতির অনুসারী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার এবং জনৈক ফজলুর রহমান নামে এক চিকিৎসক মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) প্যানেলে মহাসচিব প্রার্থীর ছড়াছড়ি। যে সকল চিকিৎসকের মহাসচিব পদে মনোনয়নপত্র দাখিলের খবর পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বিএমএর সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, বিএমএর সাবেক মহাসচিব ও বর্তমানে বিএসএমএমইউর প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপন, ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, খুলনা বিভাগের স্বাচিপ নেতা বাহার চৌধুরী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, ডা. আমিরুল হাসানসহ ডজনখানেকেরও বেশি প্রার্থী।
স্বাচিপের বাইরে জাসদ নেতা, এক সময়ের ডাকসুর জিএস ডা. মোসতাক হোসেইন মহাসচিব পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমএর কয়েকজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন থেকে ড্যাব সরে দাঁড়ানোর ফলে স্বাচিপের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে নির্বাচনে নেমেছেন। এক ডজনের বেশি মহাসচিব প্রার্থী ছাড়াও অন্যান্য পদে কয়েকজন করে প্রার্থীতা জমা দিয়েছেন। তবে মনোয়নপত্র দাখিলকারীদের মধ্যে নবীনদের চেয়ে প্রবীণদের সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ১৯৮৮, ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে বিএমএর নির্বাচিত মহাসচিব ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ (লালবাগ) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএমএ মহাসচিব ডা. আর্সলান জানান, আগামী ২২ ডিসেম্বরের এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় শেষ হয়েছে ৬ নভেম্বর। আর ২১ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়।
জানা যায়, ২০১২ সালে বিএমএর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর বিএমএতে সারা দেশে ভোটার সংখ্যা ৩৬ হাজার ১ শত ৬৬ জন। ঢাকায় ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৭০৪ জন। বিএমএর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোট ৫১ জন। তন্মধ্যে ৪৮টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ৯টি পদের মধ্যে ছয়জন কো-অপট সদস্য, দুজন বিএমএর সাবেক সভাপতি ও মহাসচিব (যদি তারা নির্বাচিত না হন) ও জার্নাল কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে একজন নিয়োগ পান।
মহাসচিবসহ অন্যান্য পদে এতো প্রার্থীর ছড়াছড়ি প্রসঙ্গে স্বাচিপের একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাকে কেউ বাধা দিতে পারবেন না, এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। ড্যাব যেহেতু অংশগ্রহণ করছে না, তাই নির্বাচনে নিজেরাই প্রতিদ্বন্দ্বী। এতে করে সদস্যরা নিজ নিজ জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারবেন।