দেশে তিনটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ ৭০ ভাগ সম্পন্ন : ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শুরু

তৃণমূল পর্যায়ের মৎস্য বিষয়ে কারিগরী জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষে গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলায় নতুন তিনটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই শতকরা ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে।
ইনস্টিটিউটগুলোতে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ শিক্ষাক্রমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলায় মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ রিয়াজ উদ্দিন সরকার গতকাল বাসস’কে একথা জানান।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই অবকাঠামোসহ এই প্রকল্পের কাজ শতকরা ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে।’ আগামী দেড় বছরের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজ শেষ করা যাবে বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী তিনি।
সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনটি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট নির্মাণের এই কার্যক্রম বিগত ২০১১-১২ অর্থ বছর থেকে শুরু হয়েছে, যা আগামি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ‘নির্মামাণাধীন তিনটি ইনস্টিটিউটে প্রতি বছর ৪০ জন করে সর্বমোট ১২০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে এবং প্রকল্প চলাকালীন প্রতি ছাত্র-ছাত্রীকে মাসিক ৯০০ টাকা হারে বৃত্তি প্রদান করা হবে।’
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ জানান, নতুন তিনটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটে জনবল নিয়োগের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য সব প্রক্রিয়া শেষ হলে এখানে যথাসম্ভব দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও এই ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট সমূহে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।
কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস জানান, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত কারিকুলাম অনুযায়ী চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ শিক্ষাক্রম পরিচালনা করা হবে। ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ কোর্সটি আট সেমিস্টারে বিভক্ত, প্রতি সেমিস্টারের মেয়াদকাল হবে ছয় মাস।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা আরও জানান, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমাধারীগণ মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ জনবল হয়ে মৎস্য খাতের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হ্যাচারি, মৎস্য খামার, মৎস্য খাদ্য কারখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনে (এনজিও) নিয়োজিত হয়ে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন এবং নিজেরাও আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মৎস্য বিষয়ে কারিগরী জ্ঞান সম্পন্ন তৃণমুল পর্যায়ের দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষে মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মৎস্য ডিপ্লোমা কোর্স বাস্তবায়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুর সদরে একটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপন করে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ শিক্ষাক্রম চালু করেছে। এই ইনস্টিটিউটে ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রী পাস করে বের হয়েছে।
এদিকে তিনটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের সহকারি পরিচালক মণিকা জানান, মৎস্য খাতে মাঠ পর্যায়ে দক্ষ জনবলের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে মৎস্য অধিদপ্তর চাঁদপুরের অভিজ্ঞতার আলোকে আরও তিনটি মৎস্য ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষে অধিদপ্তর গোপালগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ সদর ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে শিক্ষার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন যুগোপযোগী মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক অন্য একটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাসস’কে জানান, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম-নীতি অনুযায়ি বাচাই করা হবে এবং উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ওই বোর্ড কর্তৃক জারীকৃত সনদ প্রদান করা হবে। সরকারিভাবে পরিচালিত ডিপ্লোমা-ইন-ফিসারিজ শিক্ষাক্রম বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে কৃষি বিভাগের মত ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাসস’কে জানান, চলমান একটি ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি নতুন তিনটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপন করার ফলে বাংলাদেশে মৎস্য বিষয়ে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ জনবল তৈরী হবে, যারা ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৪৫ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বাংলাদেশের মৎস্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
তারা আরও বলছেন, মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো-মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের বিপুল সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে আরও মজবুত এবং স্বনির্ভর করার লক্ষে যুব সমাজকে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে অধিকতর সচেতন সম্পৃক্ত করা।
প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ রিয়াজ উদ্দিন সরকার জানান, প্রতিটি মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, অধ্যক্ষের বাসভবন, ইন্সট্রাক্টর ডরমিটরি, স্টাফ ডরমিটরি, অডিটোরিয়াম, গ্যারেজ, গার্ড রুম, সমজিদ,মৎস্য হ্যাচারি, বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন ও বাউন্ডারি ওয়াল এবং পুকুর নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া নির্মাণাধীন মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র দিয়ে সুসজ্জিত করা হচ্ছে।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য জেলা সংবাদ