একাত্তরে স্বামীহারা প্রায় অর্ধশত শহীদ জায়াকে সহায়তার অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নবমুক্তি সেনা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়ে গঠিত এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগামী ২৮ থেকে ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীর দুর্গাপুরের যুগীশো পলাশা গ্রামের ৪৩ জন ভিক্ষুক শহীদ জায়ার হাতে ১টি করে শাড়ি, ১টি করে কম্বল, ১ মন করে চাউল, ২০ কেজি করে আলু ও ১০ কেজি করে ডাল ও সঙ্গে সম্ভব হলে কিছু নগদ টাকা তুলে দিবেন। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং প্রয়োজন মতো ওষুধ সহায়তা প্রদান করা হবে।
নবমুক্তি সেনার সভাপতি সুব্রত ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, তাদের এ সংগঠনটি মূলত বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করে থাকে। তিনি জানান, যে অঞ্চলটিতে তারা যাচ্ছেন সেখানে একাত্তরে স্বামী হারা ৪৩ জন শহীদ জায়া বেঁচে থাকার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টায় ভিক্ষা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের স্বামীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও মেলেনি শহীদের স্বীকৃতি। এমনকি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন ধারণের জন্য দেয়া হয়নি সরকারি বা বেসরকারি কোনো অনুদান। তাই বাধ্য হয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে ও পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতেই প্রতিদিন ভিক্ষা করছেন।
কেন ও কীভাবে তারা এই ৪৩ শহীদ জিয়ার খোঁজ পেলেন এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অতীত অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ টেনে গল্পাকারে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টা। কুয়াশার চাদর ভেদ করে সবে মাত্র সূর্য পূর্ব আকাশে উকি মারলেও গাছের ডাল-পালা ভেদ করে তখনও পুরোপুরি মাটিতে আলো ছড়াতে পারেনি। ঠিক সে সময় দেখা গেল একদল মহিলা সাদা কাপড় পরে গ্রামের মেঠো পথ ধরে লাইন করে হেটে যাচ্ছেন।
কৌতুহলবসত কাছে গিয়ে জানা গেল তারা সবাই ভিক্ষা করার জন্য বের হয়েছেন। সাদা কাপড় পরিহিত নারীদের মধ্যে একজনের নাম নিয়তী বালা দাস। বয়স ৮০ ছুইছুই। এই বয়সে ভিক্ষা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় তার স্বামী বিভারণ চন্দ্র প্রামাণিককে প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে পাক-হানাদার বাহিনী।
সে সময়ের দুঃসহ ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেন নিয়তী বালা। আর ভিক্ষা করতে যাবার কথা ভুলে গিয়ে মাটিতে বসে পড়েন। তার সঙ্গে বসে পড়েন পঞ্চমী দাস (৭২), সুধাশু দাস (৭০), সুশীলা বালা (৭১), নিয়তী বালা (৬৮), সুন্দরী দাস (৭০), তরু বালা (৭২), অনন্ত বালা (৬৯), প্রমীলা দেবী (৬৬) ও যমুনা বালা কর্মকারসহ প্রায় ২০ জন হিন্দু ধর্মালম্বী নারী।
পেশায় চিকিৎসক সুব্রত ঘোষ জানান, শহীদ জায়াদের সহায়তা করতে তারা নিজেদের পকেট থেকে ও অন্যদের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে টাকার জোগাড় করছেন।