চলতি বছর বিদায়ের পথে। নানা কারণেই ২০১৫ ছিল আলোচিত সমালোচিত। বছরটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুর্বল করতে দেশব্যাপী নাশকতার চেষ্টা চলে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্যকর ছিল টার্গেট করে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা।
পুলিশ সদর দফতরের দেয়া এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদায়ী এ বছরে হামলা, অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণে ১৪ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। এর মধ্যে ৪ জন সরাসরি হামলায় নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বলে জানা গেছে।
অন্য একটি পরিসংখ্যানে জানা গেছে, চলতি বছরেই সন্ত্রাসী হামলাসহ বিভিন্নভাবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ৫৭ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। এর আগের বছরেও মারা যান ১০৭ জন পুলিশ সদস্য।
বছরের শুরু থেকেই নাশকতাকারীদের টার্গেটে পড়েন মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যরা। দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে বাদ যায়নি এলিট ফোর্স, র্যাব এবং বিজিবিও। এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করা হলেও বেশ কয়েকটি ঘটনার তদন্তে জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি উঠে আসে। দায় স্বীকারও করে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন।
রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বাসে বোমা হামলায় কনস্টেবল নিহত
বছরের ১৭ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশ বহনকারী একটি বাসে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কনস্টেবল শামীমসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। ১৯ দিন স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি কনস্টেবল শামীমের মৃত্যু হয়।
নিহত শামীম রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। পেট্রল বোমায় দগ্ধ ও মাথায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন। শামীমের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে।
পাবনায় এএসআই সুজাউল হত্যা
বছরটির ৪ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদী থানাধীন পাকশী পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত এএসআই মো. সুজাউল ইসলামকে মোবাইলফোনে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন সকালে সুজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০০৩ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগদান করেছিলেন তিনি। বাড়ি বগুড়া সদরের শেখপাড়ায়।
ঢাকায় গাবতলীতে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যা
গত ২২ অক্টোবর গাবতলীর দারুসসালাম থানাধীন পর্বত সিনেমা হলের সামনে চেকপোস্টে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইব্রাহিম মোল্লা। দায়ের করা মামলা (মামলা নং ৬০) মহানগর ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসানকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ঘটনায় প্রথমে বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হলেও ৬ জনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা। নিহত এএসআই ইব্রাহিম মোল্লার বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার সোনারকুলি ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে।
আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হত্যা
বছরের শেষ দিকে ৪ নভেম্বর সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আশুলিয়ার বাড়ৈপাড়া এলাকায় নন্দন পার্কের ঠিক উল্টো পাশে চেকপোস্টে প্রস্তুতিকালে দুর্বৃত্তদের চাপাতি কোপে নিহত হন কনস্টেবল মুকুল হোসেন (২৪)। এ সময় কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয় আরেক কনস্টেবল নুরে আলমকেও।
ঘটনার ১০ গজ দূরে পুলিশের আরও ৩ সদস্য অস্ত্র নিয়ে থাকলেও এগিয়ে এসে সহকর্মীকে রক্ষা না করে উল্টো পিছনে শালবন দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
তবে এ ঘটনাতেও পরদিন দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট সাইট ইনটেলিজেন্স এ তথ্য জানায়। সাহাদাত নামে জেএমবির এক সদস্য বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর ডিবি পুলিশ জানায়, সাহাদাত এ ঘটনায় জড়িত ছিল।
ঢাকায় মিলিটারি পুলিশের উপর হামলা
গত ১০ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের প্রবেশমুখে চেকপোস্টে দায়িত্বপালনকারী মিলিটারি পুলিশের সদস্য ল্যান্স কর্পোরাল সামিদুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কুপিয়ে জখম করে এক দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় হামলাকারী জামিরুল ইসলাম মানিককে আটক করে। আহত মিলিটারি পুলিশ সদস্য সামিদুলকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, দেশে চিহ্নিত একটি গোষ্ঠীর বিচার বানচালকারীরা এ হামলা চালিয়েছে। উদ্দেশ্য দেশে নৈরাজ্যকর ও ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করা।
পুলিশের ওপর ধারাবাহিক হামলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম এবং ফাঁসির রায় হওয়ায় তা বন্ধ করতে চিহ্নিত একটি মহল পুলিশের ওপর হামলা শুরু করেছে।
আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, নিজের নিরাপত্তা ও জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশকে আরও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
টানা হরতাল অবরোধে হামলা
বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। গত ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত বাজার এলাকায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। বিস্ফোরণে খিলক্ষেত থানার এসআই কামাল ও আনসার সদস্য হেলাল খান আহত হন।
৫ জানুয়ারি রাজধানীর কদমতলীতে দুর্বৃত্তরা পুলিশের রিকুইজিশন করা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে এক আনসার সদস্য দগ্ধ হন। একই দিন ফকিরাপুলে পুলিশের টহল গাড়িতে হামলা হলে আহত হন দুই পুলিশ সদস্য।
এছাড়া রাজধানীর বাইরে রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, ফেনী, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জসহ বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি জেলায় পুলিশের ওপর হামলা হয়।