জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে তিন আইনজীবীকে আটকের পর, এখন আলোচনায় এসেছে নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠন হামজা ব্রিগেড-এর নাম৷ অভিযোগ, এই হামজা ব্রিগেডকে ১৮ কোটি টাকা দিয়েছেন একজন পাকিস্তানি নাগরিক৷
গত এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম ভিত্তিক ‘জঙ্গি’ সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ বা এসএইচবি-র নাম প্রকাশ্যে আসে৷ র্যাব তখন ওই ব্রিগেডের ২৪ জন সদস্যকে আটক করে৷
চট্টগ্রাম র্যাব-এর র্যাব-৭) অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘২০১৩ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকার একটি রেস্তোরায় বসে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ গঠন করে জঙ্গিরা৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্রদের এই সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়৷ পরে তাদের পাহাড়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণও দেয়া হতো৷”
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পুলিশ কি কিছুই করতে পারছে না?
তিনি জানান, ‘‘চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারি এলকার একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ধর্মীয় বইসহ জঙ্গি সন্দেহে ১২ জনকে আটক করা হয়৷ রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালির লটমণি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র-গুলিসহ পাঁচজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার একটি বাসা থেকে বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম ও ৭৬টি হাতবোমাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পরবর্তীতে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে শহীদ হামজা ব্রিগেড-এর নাম৷
র্যাব জানায়, মাওলানা মোবারক ও আবদুল আজিজ নামে দু’জন ‘জঙ্গি’ সংগঠনটি পরিচালনা করেন৷ তাদের অবশ্য এখনো আটক করা যায়নি৷
এদিকে গত ১৮ই আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডি থেকে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও অ্যাডভোকেট মাহফুজুল হক চৌধুরী নামে তিনজন আইনজীবীকে আটক করা হয়৷ তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়৷ রিমান্ড শেষে তাদের বুধবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ জানা গেছে, তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন৷
র্যাব-এর সহকারী পরিচালক এএসপি সোহেল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় নিয়েই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷ তিনি দাবি করেন যে, ‘‘এর আগে হামজা ব্রিগেডের যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই তিন আইনজীবীকে আটক করা হয়৷”
তিন আইনজীবীর মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে৷ তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক৷ তার পরিবার দাবি করেছে যে, ‘‘রাজনৈতিক কারণে তাকে আটক করা হয়েছে এবং তারা কোনোভাবেই জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত নন৷” প্রসঙ্গত, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে তিনজন আইনজীবী হামজা ব্রিগেডকে অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা স্বীকারও করেননি৷
এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে শহীদ হামজা ব্রিগেড এক পাকিস্তানি নাগরিকের কাছ থেকে ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড (১৮কোটি টাকা) নিয়েছে৷ এই অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে নেয়া হয়৷
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে হামজা ব্রিগেডের কয়েকজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ওই পরিমাণ অর্থ পাঠানো হয়েছে৷- ডিডব্লিউ