সিনেট এবং হাউজ দুটোতেই রিপাবলিকানরা মেজরিটি পেলেও ওবামাকে ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কিন্তু তারপরও আগামী দুই বছর নিঃসঙ্গ ওবামাকে একাই পথ চলতে হবে।
এদিকে স্থানীয় সময় বুধবার হোয়াইট হাউজে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামা বিষন্নমুখে বিজয়ী দলের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচনের পরদিন হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদে মুখোমুখি হন প্রেসিডেন্ট ওবামা। তিনি রিপাবলিকানদের বিজয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানান। সম্ভাব্য সিনেট নেতা ম্যাকনেলকেও তিনি সাংবাদিক সম্মেলন থেকে অভিনন্দন জানান।
একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ভালো কিছু করার জন্য সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অনেক ইস্যু রয়েছে যা অনেকটাই এক। সেইগুলো খুঁজে বের করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি রিপাবলিকানদের উদ্দেশ্যে বলেন, সুনির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে কথা বললে বা কাজ করলে সেটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের মতামত শুনতে পেয়েছি।
কথা বলার সময় ওবামাকে বরাবরের মতো উৎফুল্ল দেখা যায়নি। বিষন্নতার কালো মেঘে তার মুখ ঢাকা ছিল। ইতোপূর্বে কোনো সংবাদ সম্মেলনে তিনি যেভাবে হেসে হেসে কথা বলেন, বুধবার সেটা চোখে পড়েনি। কখনো একটুখানি হাসলেও তা ছিল খুবই নিরস।
সাংবাদিকরা তার কাছে দলের পরাজয়, ইমগ্রেশন রিফর্ম, আইএসআইএস এর উত্থান, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, আগামী দিনে রিপাবলিকানদের সঙ্গে তার সম্ভাব্য সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করেন। ধীরস্থিরভাবে সবগুলো প্রশ্নেরই তিনি ‘কৌশলী’ উত্তর দেন।
আগামী শুক্রবার উভয় দলের নেতা হিসেবে আগামী দিনে কিভাবে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দিতে পারেন ওবামা।
এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে সিনেটে ডেমোক্রেটদের ৫৩টি এবং রিপাবলিকানদের ৪৫টি আসন ছিল। দুটি আসন ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তবে তারা দুজনেই ডেমোক্রেটদের ‘ককাসে’ যুক্ত ছিলেন। সে কারণেই তারাও ডেমোক্রেটদের সঙ্গে আছেন বলে মনে করা হতো।
১০০ আসনের মধ্যে এ বছরে ৩৬টি আসনে নতুন করে সিনেটর নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে ডেমোক্রেটদের দখলে ২১টি এবং রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে ১৫টি আসন। কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫২টি আসনের প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে আর ডেমোক্রেটরা ৫৩ থেকে ৪৫ নেমে গিয়েছে। স্বতন্ত্র দুজন প্রার্থীও হেরে গেছেন এবারের নির্বাচনে।
অন্যদিকে হাউজে রিপাবলিকানদের ২৩৩ এবং ডেমোক্রেটদের ১৯৯ জন হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা কংগ্রেসম্যান ছিলেন। রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যেই তাদের আসন আরো বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। সঙ্গত কারণেই ডেমোক্রেটদের আসন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এখন রিপাবলিকানদের ২৪৪ এবং ডেমোক্রেটদেও আসন ১৭৯ এসে দাঁড়িয়েছে।
গভর্ণর পদে ডেমোক্রেটরা ২১ থেকে ১৬ তে নেমে এলেও রিপাবলিকানরা ২৯ থেকে ৩১ এসে দাঁড়িয়েছে। সিনেটে মেজরিটির জন্য ৫১টি এবং হাউজে মেজরিটির জন্য ২১৮টি আসনের প্রয়োজন ছিল। হাউজে আগে থেকেই রিপাবলিকানদের মেজরিটি থাকলেও এবারের নির্বাচনে তারা সিনেটেও মেজরিটি পেলো। ৮ বছর পরে রিপাবলিকানরা সিনেটে তাদের সংখ্যাঘরিষ্ঠতা পেলো। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে হাউজে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানেও জয় পেলো তারা। সিনেট, হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ, গভর্নর পদ ছাড়াও মঙ্গলবার রাজ্য ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচনেও ভোট হয়।
এবারের নির্বাচনের কেনটাকি অঙ্গরাজ্য থেকে ম্যাককনেল সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার। সেটা হলে প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে তার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। তবে সেটা কতোটুকু আন্তরিক হবে তা নিয়েও ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। ডেমোক্রেটদের শাসনকালের শেষ সময়ে এসে উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট হয়ে আসলে কতোটুকু কাজ করার সুযোগ মিলবে সেটা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ম্যাককনেলকে দলীয় প্রতিশ্রুতি পূরণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে নানা আইন প্রণয়ন, নীতিমালা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যও বারবার প্রেসিডেন্টের দ্বারস্ত হতে হবে। বিশেষ করে কর আইন ও অভিবাসননীতি সংস্কার, কানাডা থেকে পাইপ লাইনে তেল আনাসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে ম্যাককনেলকে। এসব করতে গিয়ে তিনি ওবামা এবং দলের সিনেটর এবং হাউজ প্রতিনিধিদের মতামতের সম্মিলন ঘটাতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
এ্যাককনেল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আর ‘গভর্নমেন্ট সাটডাউন’ এর মতো এমন কিছু ভবিষ্যতে দেখতে চায় না যেটা জাতীয় বিতর্কে পরিণত হয়। একই সঙ্গে কোনো আদর্শিক দ্বন্ধে তারা ওবামার সঙ্গে জড়াবে বলেও জানান এই নেতা।
আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়টাই হয়তো পার করবেন আগামী দুই বছর। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে নিঃসঙ্গ এই প্রেসিডেন্টের জন্য শান্তনার অজুহাত একটাই। আর সেটা হচ্ছে রিপাবলিকানরা সিনেটের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট হলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তার ইচ্ছাই এখনো সবার ওপরে থাকবে। বিজয়ী হওয়ার পরও সেটাই হয়তো রিপাবলিকানদের জন্য মনোবেদনার কারণ হতে পারে।