কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরে দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলকে নিরাপদ আস্থানা হিসেবে ব্যবহার করে চোরাকারবারিদের একটি সিন্ডিকেট ভারতীয় বাজাজ কোম্পানির মোটর সাইকেল প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে পাচার করে আনছে।
পাচারকারীরা ছিটমহলটির বেশ কিছু বাড়িতে মোটর সাইকেল রেখে সুযোগ বুঝে ভূয়া নম্বরপত্র লাগিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে বিক্রি করছে।
আইনি জটিলতা থাকায় ভারতীয় এ ছিটমহলটিতে সহজেই পুলিশ কিংবা বিজিবি ঢুকতে না পারায় সিন্ডিকেটটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি একজন প্রভাষকের ১০০ সিসি প্লাটিনা, একজন ঠিকাদারের ইয়ামাহা ও একজন ব্যবসায়ীর ১০০ সিসি ডিসকভার মোটর সাইকেল চুরি হলে ফুলবাড়ি এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
পরে পুলিশ মোটর সাইকেল উদ্ধারে সাড়াশি অভিযান শুরু করে এবং সীমান্তের ওই এলাকা থেকে পাঁচটি ও বিজিবি একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
সীমান্তের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র জানায়, মোটরসাইকেল পাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে ভারতীয় বিএসএফ, বাংলাদেশের বিজিবি ও সীমান্ত লাগোয়া থানার কতিপয় অসাধু ব্যক্তির সখ্যতা থাকায় দীর্ঘদিন থেকে নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
তারা মোটরসাইকেল পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে, উপজেলার কাশিয়াবাড়ী, বিদ্যাবাগিশ ঠোষ, অনন্তপুর খালিশা কোটাল ও গোরকমন্ডপ নামাটারী সীমান্তকে।
প্রতিরাতে নির্দিষ্ট এসব এলাকা দিয়ে পাচারকরীরা ভারতীয় মোবাইল ফোনে বাংলাদেশি ওই চক্রটির সঙ্গে কথা আদান প্রদানের পর নির্বিঘ্নে পাচার করে দিচ্ছে এসব মোটর সাইকেল।
এ কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে, বিজিবির লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত গংগারহাটের জয়নাল ও মোজাফ্ফর আলী। এদের মাধ্যমেই প্রতিটি গাড়ির জন্য পুলিশ দুই হাজার ও বিজিবি তিন হাজার টাকা করে নিচ্ছে।
অবৈধ এ জমজমাট ব্যবসায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সীমান্ত ঘেঁষা কাশিয়াবাড়ীর আবু তালেব, মমিনুল, নাখারজান (কুড়ার পাড়) এলাকার জাহাঙ্গীর আলম।
সিন্ডিকেটটি নজরুলের বাড়ীতে নতুন পয়েন্ট তৈরি করে প্রকাশ্যেই চোরাই মোটর সাইকেল বেচাকেনা করছে। এছাড়াও অতি নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে ওই ছিটমহলের বাসিন্দা মতিউর রহমান, শাহা-আলম, সিরাজুল ইসলাম সেরা, শফিকুল ইসলামের বাড়ি।
এখানেই চোরাই মোটরসাইকেলের চেসিস নম্বর ডাইসের মাধ্যমে পরিবর্তন করে এ ব্যবসা চালাচ্ছে। পাচার হয়ে আসা মোটরসাইকেলগুলো দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় এ অঞ্চলের যুবকরা ঝুঁকি নিয়ে কিনে তা সুযোগ বুঝে দেশের নানা জায়গায় বিক্রি করে দিচ্ছে।
এ ভাবেই দেশের সর্বত্র টানা গাড়ি নামে পরিচিত ভূয়া নম্বর প্লেট লাগানো মোটরসাইকেলে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব গাড়ি ট্রাফিকের হাতে ধরা পড়লে কদাচিৎ মামলা হয়, অধিকাংশই টাকার বিনিময়ে থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রশীদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ভারতীয় ছিটের ভেতর প্রবেশ করার সুযোগ না থাকায় চোরাই মোটর সাইকেল ও মাদক ব্যবসায়ীসহ দুস্কৃতিকারীদেরকে আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও কৌশলে পাঁচটি মোটর সাইকেল আটক করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম বিজিবির কাশিপুর কোম্পানির সুবেদার ইমরান নিজামী বলেন, মোটর সাইকেল পাচারের সঙ্গে কোন সোর্স জড়িত থাকলে তাকেও আটক করা হবে, আমরা সতর্ক রয়েছি।