বাংলাদেশের যুবশক্তি, স্বল্প মজুরি ও অন্যান্য সুবিধার কথা তুলে ধরে এদেশে বিনিয়োগ করতে চীনের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরাই সবচেয়ে বেশি উদার।”
শনিবার সকালে চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের হায়জেং সম্মেলন কেন্দ্রে নবম চায়না-সাউথ এশিয়া বিজনেস ফোরামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনে রফতনি করছে চারশ ৫৮ দশমিক ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে চীন থেকে আমদানি করেছে ছয় দশমিক ৩০৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।” চীনের বাংলাদেশ থেকে আরো তৈরি পোশাক, ওষুধ, কুটির শিল্প, সিরামিক, চামড়াজাত পণ্য ও মাছ আমদানি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশে চীনের আরো বিনিয়োগ দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, মুনাফা ঘরে তোলা, জ্বালানির মূল্যের স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের শিল্প নীতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেয়া বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে তাদের তৈরি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য উন্নত দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে।”
বাংলাদেশের যুবশক্তি ও স্বল্প মজুরির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থার জন্য দক্ষিণ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও চীনের তিন বিলিয়ন মানুষের কাছে বাংলাদেশের পণ্য সহজেই পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।”
চীনের বিনিয়োগকারীদৈর জন্য চট্টগ্রামে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের সাতটি অঞ্চলে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ‘ইকনোমিক জোনস অ্যাক্ট-২০১০’ এর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের বাণিজ্য, শিল্প, মানব সম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো তৈরি, ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
ক্রমবর্ধমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
চীনের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমরা আপনাদেরকে আমাদের লাভের অংশীদার হিসাবে দেখতে চাই এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আমাদের সহযাত্রী হিসাবে পেতে চাই।”
ব্যাপক অর্থনৈতিক ও কারিগরি অগ্রগতিতে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
ফোরামে অন্যদের মধ্যে মালদ্বীপের উপ-রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ জামিল আহমেদ, সার্কের মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা, সার্ক শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ইসমাইল আসিফ, চীন কমিউনিস্ট পার্টির ইউনান প্রদেশের সচিব কিন গুয়াংরং এবং চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়ন কাউন্সিলের সভাপতি জিয়াং জেংউই বক্তব্য দেন।