নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকার এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে কোন নীতি গ্রহণ করে, তাই নিয়েই চলছে আলোচনা৷ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সাধারণ মানুষ কেউ আলোচনার বাইরে নেই৷ যেন সবার চোখই এখন দিল্লির দিকে৷
নরেন্দ্র মোদি এবং তার মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ বাংলাদেশে একটি বড় খবর৷ তাই সোমবার সন্ধ্যার সেই অনুষ্ঠান এবং তার খবর জানার আগ্রহও ছিল বেশ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষ এ নিয়ে কথা বলেছেন, মন্তব্য করেছেন সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে৷ একই সঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ঢুঁ মেরেছেন তারা খবর জানতে৷ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও এ নিয়ে সর্বশেষ খবর পরিবেশনে ছিল ব্যস্ত৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, “এই আগ্রহ স্বাভাবিক৷ ভারত আমাদের সবচেয়ে বৃহৎ এবং ক্ষমতাধর প্রতিবেশী৷ এছাড়া কংগ্রেসের পর বিজেপি ক্ষমতায় আসায় এই আগ্রহ বেড়ে গেছে৷ কারণ নতুন একটি দল ভারতের ক্ষমতায় এসেছে৷ তাই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কোনো অবস্থা সৃষ্টি হবে কিনা – সে প্রশ্ন আছে অনেকের মনেই৷’’
তিনি বলেন, “তবে প্রশ্ন এবং সংশয় যাই থাকুক না কেন, এটা একটি অমোঘ সত্য যে, আমরা চাইলেই প্রতিবেশী পরিবর্তন করতে পারবো না৷ তাই আমরা চাই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠুক৷”
শান্তনু মজুমদার বলেন, “মোদি সরকার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়৷ তিস্তার পানি, সীমানা চিহ্নিতকরা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ – এই বিষয়গুলো অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে৷ নতুন সরকার তা ঝুলিয়ে রাখবে না সমাধান করবে – তা আমাদের জানা দরকার৷”
তার মতে, “ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারের আদর্শিক দূরত্ব থাকতে পারে৷ তবে তা সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়৷”
অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক কাজী আনোয়ারুল মাসুদ বলেন, “ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা ধারাবাহিকতা আছে৷ আছে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট৷ দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কও বহুমাত্রিক৷ তাই সম্পর্কের ধারাবাহিকতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু তারপরও নতুন সরকারের সিদ্ধান্ত এবং কাজ না দেখে আগাম কোনো মন্তব্য করা কঠিন।”
তিনি বলেন, “ভারতের নতুন এই সরকারটি রাজনৈতিক আদর্শ আগের সরকারের থেকে ভিন্ন৷ কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নীতি ভিন্ন হবে কিনা – তা বলার সময় এখনো আসেনি৷’’
তাই তিনি জানান, “শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়, কূটনীতিক এবং বিশ্লেষকরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন৷ তারা বোঝার চেষ্টা করছেন ভারতে সরকার পরিবর্তন কতটা গুণগত আর কতটা প্রচারণামূলক।”
আনোয়ারুল মাসুদের কথায়, ‘‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কতগুলো ‘কমন’ ইস্যু আছে৷ পানি, সীমান্ত, নিরাপত্তা, বণিজ্য – এ সব৷ আর এই সব ইস্যুই হবে সম্পর্কের নিয়ামক৷ কারণ এই ইস্যুগুলোর সঙ্গে নাগরিকরা সরাসরি জড়িত৷ এর মাধ্যমে ভোটের হিসাব হয়৷ মোদি যেমন ভোটের হিসাব করেছেন৷ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরাও তাই করেন।” সূত্র: ডিডব্লিউ