শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু

শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে তাবলীগ জামাতের ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি ইজতেমাস্থলে সমবেত হওয়ায় বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই ময়দানে ঈমান, আমল ও আখলাকসহ তাবলীগের ছয় উসুল সম্পর্কে অনানুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, মুসল্লিরা নিজ নিজ জেলার নির্ধারিত স্থানে (খেত্তায়) অবস্থান নিচ্ছেন। আগামীকাল ইজতেমার প্রথম দফার প্রথম দিন দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপমহাদেশের বৃহত্তম জুমার জামায়াত। ইজতেমায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের স্রোত এখন টঙ্গীমুখী। ট্রেন, বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি, স্কুটার, নৌকা ও পায়ে হেঁটে লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা মাঠে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে।ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের কয়েক হাজার মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফা। চারদিন বিরতি দিয়ে আবার ৩১ জানুয়ারি শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা। ইজতেমা স্থলে মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির ‘আল্লাহু আকবর’ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে বিশ্ব ইজতেমার মাঠ। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী এখন ধর্মীয় উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। পুরো এলাকা টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষে ভরে গেছে। মাঠের আশে-পাশে চলছে মুসল্লিদের ওজু, গোসল আর রান্নার আয়োজন। শাখা রাস্তাগুলোতে বাঁশের লাঠি হাতে অসংখ্য তাবলীগী স্বেচ্ছাসেবক দাঁড়িয়ে রয়েছে।ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমার সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ১৬১ একরের সুবিশাল ময়দানকে ঢেকে দেয়া হয়েছে চটের সামিয়ানা দিয়ে। তবে এ বছর ঢাকা জেলার মুসল্লিদের নির্ধারিত খেত্তায় সামিয়ানা দেয়া হয়নি। নিকটবর্তী এ জেলার মুসল্লিরা মূল প্যান্ডেল ঘেঁষে নিজস্ব উদ্যোগে তাদের নিজ নিজ জামায়াতের জন্য খেত্তার নির্ধারিত স্থানে আলাদা সামিয়ানা টানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের সামিয়ানা টানানোর জন্য আগেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাঁশের খুঁটি পুঁতে রেখেছেন তাবলীগ জামায়াত কর্তৃপক্ষ।সাধারণ মুসল্লিদের রান্না-বান্নার স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকলেও মাঠের পশ্চিম-উত্তরে টিন শেডের উন্নত আবাসনে বিদেশি মুসল্লিদের রান্নার জন্য গ্যাসসহ বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ এবং আধুনিক সুবিধা রয়েছে। এ বছর মাঠে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য পুরো ময়দানকে প্রথম পর্বে ৪০ ও দ্বিতীয় পর্বে ৩৮ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।

জেলাওয়ারী জামায়াতবদ্ধ মুসল্লিরা এসব নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করছেন। ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠের চারদিকে পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ৫ সেক্টরের সদস্যরা ৩ স্তরের নিছিদ্র নিরাপত্তা স্তর গড়ে তুলেছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিভিন্ন সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও সিসি টিভি স্থাপন করা হয়েছে।ইতোমধ্যে টঙ্গীর পুরো এলাকাকে নিরাপত্তা জালে ঢেকে দেয়া হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইজতেমা কর্তৃপক্ষ ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি  সম্পন্ন করেছেন। মাঠে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে পর্যাপ্ত ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপনসহ টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে বেড দ্বিগুণ করা হয়েছে। হাসপাতালে রোগী স্থানান্তরে থাকবে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স এবং অগ্নিনির্বাপনে থাকবে দমকল বাহিনী ।

তাবলিগ জামায়াতের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সেখানে নিয়োজিত রয়েছে র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, আনসার সদস্যসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবহিনীর সদস্যরা। পকেটমার ও ছিনতাইদের ধরতে সার্বক্ষণিকভাবে থাকছে গোয়েন্দা দল। ইজতেমা চলাকালে মোবাইল কোর্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

অন্যান্য ইসলামী জগত বাংলাদেশ