ঘোষিত তফসিল অনুযায়ীই নির্বাচন হবে বলে দলের নেতাদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যথাসময়েই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এতে কে এলো আর না এলো তা বিষয় নয়। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠকে তিনি একথা বলেন। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সাংবাদিকদের জানান, যথাসময়ে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ মত দিয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সর্বোচ্চ সহায়তা নেয়া হবে বলে দলের নেতাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন ও কর্মসূচির বিপরীতে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া জ্বালাও পোড়াওয়ের মতো কর্মসূচির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সর্বশেষ অবস্থানের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে নেতাদের বলেছেন, এখনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সময়মতো সবই পরিষ্কার হবে। এদিকে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে বন্ধুরাষ্ট্র ও বিদেশী দাতা সংস্থার অবস্থান নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা তো দেখে তাদের দেশে কিভাবে নির্বাচন হয়। আমরা সেভাবে নির্বাচন করতে চাইছি। এ বিষয়টি তারা বুঝতে চায় না। আমরা একবার শুরু করতে চাই। যাতে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়। কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে। বিকাল সাড়ে চারটা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে মাঝে বিরতি দিয়ে রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে দলীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে দলের নেতারা একমত হয়েছেন।
এদিকে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল, প্রেসিডেন্ট হয়েছিল তাদের হাতে গড়া দল বিএনপি ও একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত এক হয়ে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষ হত্যা করছে। জনগণের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে। যারা এভাবে মানুষ খুন করছে তাদের হাতেনাতে ধরিয়ে দিন।
বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন, তার আর কত লাশ লাগবে? কত লাশ হলে তার আত্মা শান্তি পাবে? শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের মতো মানুষ হত্যার দায়ে তাকেও (খালেদা জিয়া) একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। মানুষ খুন তার কাছে কিছুই না। মানুষের রক্ত নিয়েই তার আনন্দ। তাই জনগণের রক্ত নিয়ে তিনি হোলি খেলেন। লাশ নিয়েই তার খেলা। দেশের প্রতি তার কোন দায়িত্ববোধ নেই। শুধু ক্ষমতার মোহ। গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয় নাই- সে প্রতিশোধ নিচ্ছেন এখন। বিরোধী দলের সহিংস কর্মসূচির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন কর্মসূচির নামে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে, ট্রেনের ফিশপ্লেট খুলে দুর্ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সিএনজি-অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ড্রাইভার ও যাত্রীদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। এসব সাধারণ মানুষের ওপর তার কিসের ক্ষোভ?
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি জনগণকে বীতশ্রদ্ধ করতেই এসব করা হচ্ছে। তাদের নেতা জিয়াউর রহমানই তো বলেছিলেন, আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ান। তারাও তাদের নেতার ইচ্ছার বাস্তবায়ন করছে। এরা আসলে রাজনীতিবিদ না, খুনি।
তিনি বলেন, তাদের রাজনীতি ওসামা বিন লাদেনের মতো। পালিয়ে থেকে গোপন ভিডিও প্রচার করে। রাজনীতির খেলার নামে, দেশের জন্য যারা রাজনীতি করে, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা জেনারেলের পেট থেকে বের হওয়া এসব রাজনীতিক কলঙ্ক সৃষ্টি করছে।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অবরোধ দিয়ে তিনি এসি রুমে বসে স্যুপ আর মুরগির রোস্ট চিবান। আর তার আগুনে জনগণ পুড়ে মরে। এ দুষ্ট চক্রের হাত থেকে দেশ কবে মুক্তি পাবে সেটাই দেখার বিষয়।
সশস্ত্র বাহিনী সব সময় জনগণের সঙ্গে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে কেবল যুদ্ধের জন্য নয়, বরং শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যে কোন আগ্রাসন থেকে দেশের ভূখণ্ড রক্ষায় শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজন। একটি দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সব সময় জনগণের আশা-আকাঙক্ষা পূরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে তাদের সঙ্গে থাকবে। গতকাল তেজগাঁও কার্যালয়ে এনডিসি কমান্ড্যান্ট, ফ্যাকাল্টিস, স্টাফ মেম্বারস এবং এনডিসি’র নতুন গ্র্যাজুয়েটস ও ওয়ার কোর্স প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। বছরব্যাপী এই এনডিসি কোর্সে দেশ ও বিদেশের মোট ৬৪ জন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা অংশ নেন। এর মধ্যে মিশর, নাইজেরিয়া, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, জর্ডান ও তাঞ্জিনিয়ার ২৬ সামরিক কর্মকর্তা রয়েছেন। সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করায় এনডিসি গ্র্যাজুয়েটসদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে এদেশে সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র ও জুনিয়র অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। বিগত মেয়াদে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় এবং বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বনামধন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যা দেশের জন্য গৌরবের বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এনডিসি কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল মোল্লাহ ফজলে আকবরও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমদ সিদ্দিক (অব.) এবং সিনিয়র সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক সমন্বয় ও শান্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে। বিদেশী ক্যাডেটদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে তাদের বছরব্যাপী অবস্থানে অনেক বাংলাদেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা চিরকাল বজায় থাকবে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্বিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাহিনীর সদস্যরা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে।