এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড. মাহফুজুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে ’মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ নামে একটি বই রচনা করেছেন। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের ব্যানারে বইটি এ বছরের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর নির্মিত একটি প্রামান্যচিত্রের ডিভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে এটিএন বাংলার স্টুডিওতে ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টায় বেশ কজন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বইটি মোড়ক উন্মোচনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক মুস্তফা নূরউল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার লে. জেনারেল (অবঃ) হারুন অর রশীদ, বীর প্রতীক। এছাড়াও বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম এ অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। নিজের অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ বইটি তিনি রচনা করেছেন। অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরেছি। ৪০ বছর পেরিয়ে যাবার পরও স্বাধীনতার ঘোষনাকারী কে এ নিয়ে এখনো বির্তক চলছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের এমন অনেক বিষয় নিয়ে এখনো বির্তক চলছে। এ বির্তকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্বিধা দেখা দিয়েছে। উপযুক্ত প্রমান ও যুক্তির উপর নির্ভর করে সত্যিকার ইতিহাসকে তুলে ধরেছি এ বইটিতে। এর আগেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর একটি প্রামান্যচিত্র তৈরি করেছিলাম। এ বইটির মাধ্যমে তা লিখিত দলিল হিসেবে প্রকাশ করেছি।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর লিখিত এ বইটির মোড়ক উম্মোচনের দায়িত্ব আমাকে দেওয়ায় আমি বেশ গর্বিত। আমাদের শপথ নিতে হবে, যতদিন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ না হবে ততদিন আমরা লিখে যাব’।
অধ্যাপক মুস্তফা নূরউল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা স্বাধীন হয়েছি, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছি যা এখন আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। আর এই ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন ড. মাহফুজুর রহমান। তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই’।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে ড. মাহফুজুর রহমানকে বইটি প্রকাশের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বইটিতে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালী জাতির বিজয়ের সঠিক ইতিহাস স্থান পেয়েছে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭ই মার্চের ভাষন, ৭১ এ পাক হানাদার বাহিনীর নৃসংসতা, বর্বরতা, গণহত্যা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন, জর্জ হ্যারিসনের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ার প্রচেষ্টা, পাক বাহিনীর আত্মসমর্পন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ মুক্তিযুদ্ধের দু®প্রাপ্য ও খুটি নাটি তথ্য বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
দূর্লভ সব ছবি এবং ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর ইপিআর বেতারে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং পাক বাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিলও বইটিতে স্থান পেয়েছে। ৪২ পাতার এ বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মূল তথ্য নিয়ে সারমর্ম আকারে তুলে ধরা হয়েছে।