পৃথক দুই দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার জজ আদালতে হাজির হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বুধবার বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শাইরুল কবীর খান এ খবর জানিয়েছেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া দুই মাসের জামিনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার তার জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এদিন তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নেবেন।
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আদালতে খালেদা জিয়া উপস্থিত হবেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, একই দিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দেবেন তিনি। এদিন এ মামলার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য্য আছে।
উল্লেখ্য, এর আগে চারবার পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে আসেন খালেদা।
প্রথমবার আসেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একটি দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে মহানগর বিশেষ দায়রা আদালতে। দ্বিতীয়বার আসেন ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে সিএমএম আদালতে। তৃতীয়বার আসেন ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির দিন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে। সর্বশেষ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিননামা দাখিল করতে গত ১৭ জানুয়ারি চতুর্থবার সিএমএম আদালতে হাজির হন তিনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
গত বছর ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চার জনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন পান। ১৭ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন খালেদা জিয়া।
মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানও জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
মামলাটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালতে বিচারাধীন আছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
তারেক রহমান সরকারের নির্র্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ মামলাটি তদন্ত করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
ওই দিন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর নি¤œ আদালতে হাজির হন তিনি।
এরপর তিনি গত ২ বছর মামলার হাজিরা দিতে আদালতে আসেননি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোজাম্মেল হোসেইন একাধিকবার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
মামলাটির অভিযোগ শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য্য আছে।