ফরিদপুর সদর আসনে একে আজাদ

ফরিদপুর সদর আসনে একে আজাদ

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা একে আজাদকে নিয়ে তোলপাড় চলছে ফরিদপুর আওয়ামী লীগে। ফরিদপুরে চাউর আছে সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন একে আজাদ। বর্তমানে ওই আসনের এমপি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মেয়ে পুতুলের শ্বশুর। গত ১১ই আগস্ট ফরিদপুর শহরে একটি সংবর্ধনা সভায়  যোগ দিতে যাওয়ার পথে পুলিশ হামলা করে একে আজাদের গাড়ি বহরে। হামলার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠে ফরিদপুরে। একে আজাদ আওয়ামী লীগের নেতা- পুলিশ তার গাড়িতে হামলা করবে কেন? রাজনৈতিক নেতারা বলছেন হামলার নেপথ্যে হয়তো মনোনয়ন দ্বন্দ্ব কাজ করেছে।
অভ্যন্তরীণ কলহে জর্জরিত ফরিদপুর আওয়ামী লীগ: দিন যত যাচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেয়ে ফারাক তত বাড়ছে জেলা আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ নেতা এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদের গাড়ি বহরে হামলা নিয়ে তোলপাড় চলছে আওয়ামী লীগে। গোটা ফরিদপুরের মানুষের মুখে মুখে এখন ওই হামলার কথা। যদিও মন্ত্রী বলছেন তিনি কেন পুলিশ দিয়ে হামলা করাবেন? তিনি ওই নোংরা রাজনীতি করেন না। কিন্তু সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে হামলার নেপথ্যে মন্ত্রীর হাত আছে। একে আজাদ বলেছেন, না তিনি সদর আসনে এখনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান না। তিনি না চাইলেও এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়েছে একে আজাদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন। প্রায় বছরখানেক ধরে নিজের জেলা ফরিদপুরে একে আজাদ স্বাভাবিক গতিতে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানও করতে পারছেন না। নানা ভাবে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। জেলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সদর আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য এক বিষফোঁড়া। ১৯৭৩ সালের পর থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪০ বছর পর আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তার আগে ওই আসন থেকে  পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। তিনি বিএনপি সরকারের সময়ে তিনবার মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি প্রার্থী হিসেবে টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হলেও গত নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেয়নি। মনোনয়ন দেয়া হয় চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে। কামাল ইবনে ইউসুফ স্বতন্ত্র নির্বাচন করে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। চারদলীয় প্রার্থী হয়েও তৃতীয় অবস্থানে থাকেন মুজাহিদ। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে এলাকায় লেগে আছেন কামাল ইবনে ইউসুফ। বিএনপি’র রাজনীতিতে এখন তিনি শক্ত অবস্থানে। নির্বাচনী এলাকাও তিনি গুছিয়ে নিয়েছেন। বিপরীতে বিভক্তি আছে আওয়ামী লীগে। দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কলহ দিনে দিনে আরও বিস্তৃত হচ্ছে। একদিকে মন্ত্রী অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী। জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা কোন কর্মসূচি পালন করলে সেখানে মন্ত্রী যান না, আবার মন্ত্রীর কোন কর্মসূচিতে অংশ নেন না জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। দলীয় অভ্যন্তরীণ কলহে রক্ত ঝরার ঘটনাও ঘটেছে। কুপিয়ে আহত করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার নুর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুলকে।
নির্যাতিত বঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা সমপ্রতি এক সারিতে এসেছিলেন একে আজাদকে কেন্দ্র করে। এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। সমপ্রতি ফরিদপুরের জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক ঘরোয়া বৈঠকে একে আজাদ বলেছেন, তিনি এবারই মনোনয়ন চান না, তবে তিনি ফরিদপুর সদর আসনের নেতাকর্মীদেরকে সংগঠিত করতে চান। সে জন্যই এখানে কাজ করছেন। কিন্তু বাস্তবে এ খবরটিই উল্টোভাবে পৌঁছে মন্ত্রী পাড়ায়। সেখানে খবর দেয়া হয়েছে একে আজাদ সদর আসন থেকে মনোনয়ন চান। ১১ই আগস্ট একে আজাদের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে কেবল সেটাই নয়। ফরিদপুরে তার নানা অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হচ্ছে প্রায় বছরখানেক ধরে। গত ২রা আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠান ছিলো। জেলা কমিটির সভাপতিকে দিয়ে ইফতার মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়। ইফতার মাহফিল বন্ধ করার নেপথ্য কারণ সেখানে একে আজাদের যাওয়ার কথা ছিলো। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ফরিদপুরবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় ১১ই আগস্ট। পিটিয়ে আহত করেন তার গাড়িবহরে থাকা লোকদের। এ হামলার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে ফরিদপুরে। নিন্দা জানান সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। হামলার পর অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় একে আজাদ দুঃখ করে  বলেন, বিগত নির্বাচনে যার পক্ষে দিন-রাত কাজ করেছি তিনি আমার রক্ত ঝরালেন অথচ যার বিরোধিতা করেছি তিনি ফুল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনি আরও ক্ষমতাবান হন, আপনার জন্য আরও কাজ করবো আমরা।
একে আজাদের গাড়িবহরে হামলার নিন্দা জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, একে আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কারও ইঙ্গিত ছাড়া  হামলা করেছে এটা মনে হয় না। জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ সম্পর্কে বলেন, আমাদের বিরোধ নেই। তবে মন্ত্রী কোন কাজে আমাদের ডাকেন না, তার পছন্দের কয়েকজনকে নিয়ে কাজ করেন, জেলা আওয়ামী লীগকে পাত্তা দেন না। সে কারণে আমরা দলের কাজ করি, তার কাছে যাই না। তবে নির্বাচনে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেন তার জন্য কাজ করবো। মন্ত্রী গ্রুপের হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জায়নুল আবেদীন বলেন, একে আজাদও আওয়ামী লীগের লোক। তার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে কিনা আমি তা জানি না

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি