রমজান মাস হচ্ছে সব পার্থিব ব্যস্ততা কমিয়ে শুধুই ইবাদতে মনোনিবেশ করার জন্য। হজরত উবায়দা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একবার রমজানের কিছু আগে হজরত রাসূল (সা.) আমাদের বললেন, রমজান আসন্ন। এটা খুবই বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। ইবাদতে তোমাদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তা নিয়ে গর্ব করেন। সুতরাং তোমরা এ মাসে আল্লাহকে সৎকাজ দেখাও। যে এই মাসে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয় সে-ই প্রকৃত হতভাগা (তাবরানি)। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, রমজান এলে রাসূল (সা.)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। অধিকহারে নামাজ আদায় করতেন। অপূর্ব বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে প্রার্থনা করতেন। মহান আল্লাহর ভয় বেড়ে যেত। আরেকটি হাদিসে বর্ণিত, হজরত আয়শা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) রমজানে শয্যা গ্রহণ করতেন না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাধারণত রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করলেও কোনো কোনো রমজানে সারা মাস এবং কোনো কোনো রমজানে ২০ দিন ইতেকাফ করেছেন বলেও হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। ইতেকাফ অর্থই সব পার্থিব ঝামেলা বাদ দিয়ে শুধু ইবাদতের জন্য মসজিদে চলে আসা। যুগে যুগে আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখরাও রমজানে অধিক ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। অনেক পীর-বুজুর্গরা তাদের মুরিদ-মুতাল্লিকিনদের নিয়ে সারা রমজান বা অন্তত শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। সারা দিন সবাই ইবাদতে মশগুল থাকতেন। ইবাদতের অন্যরকম এক আবেগঘন, ধ্যানমগ্ন পরিবেশ সৃষ্টি হতো রমজানে। বিশেষত অনেকেই এ মাসে এত অধিক কোরআন তেলাওয়াত করতেন যে, এখন যেন আমরা তা ভাবতেও পারি না। হজরত শাইখুল হাদিস যাকারিয়া (র.)-এর পরিবারের লোকেরা রমজানে দৈনিক ১৫-২০ পারা কোরআন তেলাওয়াত করতেন। হজরত খলীল আহমদ সাহরান পুরী (র.) বার্ধক্যজনিত কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়ার পরও রমজানে মাগরিবের পর নফল নামাজে সোয়া পারা তেলাওয়াত করতেন। আবার তাহাজ্জুদে এবং সেহরি খাওয়ার পর ফজরের আগে এবং জোহরের পর থেকে আসর পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত করতেন। হজরত শাইখুল হিন্দ (র.) তারাবির পর থেকে ফজর পর্যন্ত নফল নামাজের পরপর কয়েকজন হাফেজের কাছে থেকে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত শুনতেন। হজরত শাহ আবদুর রহীম বায়পুরীর (র.) দরবারে রমজান মাসে শুধুই কোরআন তেলাওয়াত হতো। মোটকথা, রমজান শুধুই ইবাদতের মাস, হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম এবং যুগে যুগে পীর-বুজুর্গদের আমল থেকে অন্তত সেটাই প্রমাণিত হয়। সুতরাং আমাদেরও উচিত এ মাসে অধিক ইবাদতে মশগুল হওয়া এবং ইবাদতের ব্যাপারেই পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, … এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত (আততাওফিক-২৬)। অর্থাৎ পৃথিবীতে মানুষ বিভিন্ন বস্তু, ধন-সম্পদ অর্জনের জন্য পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু এ সবই ধ্বংসশীল। এগুলো প্রতিযোগিতার যোগ্য নয়। জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামতরাজির জন্যই ইবাদতের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করা উচিত। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয়, বর্তমানে অন্য মাসের মতো রমজানেও ইবাদতের ব্যাপারে মারাÍক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন, বর্তমানে মুসলমানদের অন্তরে রমজানের কোনো বিশেষ গুরুত্বই নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া একান্ত জরুরি।
আজ বৃহস্পতিবার। আজকের দিবাগত রাত শুক্রবারের রাত। জুমার রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, জুমার রাত উজ্জ্বল রজনী। আর জুমার দিবস অধিক প্রোজ্জ্বল (বায়হাকি ৩/৩৭৫)। জুমার রাতে দোয়া কবুল হয় বলেও বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, পাঁচটি রাতে দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। জুমার রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, পনের শাবানের রাত এবং দুই ঈদের রাত। হজরত ইমাম শাফি (র.) বলেন, আমাদের কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, পাঁচটি রাতে দোয়া কবুল হয়। জুমার রাত, দুই ঈদের রাত, রজবের প্রথম রাত এবং পনের শাবান রাত। পবিত্র রমজানের প্রতিটি রাত অতিমূল্যবান। তদুপরি আজকের রাত রমজানের জুমার রাত হওয়ায় এর ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকগুণ বেশি তাতে সন্দেহ নেই। সুতরাং আজ রাতে এবং এ রমজানের আরও যে ক’টি জুমার রাত আসবে সব রাতেই বিশেষভাবে ইবাদতে দোয়ায় মনোনিবেশ করা উচিত। তাহলে অবশ্যই আমরা রমজানের রহমত-বরকত-মাগফিরাত লাভে ধন্য হব ইনশাআল্লাহ। –