চির বিশ্রামে চলে গেলেন ড. এম জহীর। শায়িত হলেন পিতার কবরে। দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রখ্যাত এই কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ড. জহীর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময়) থাইল্যান্ডের ব্যাংকক জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ব্যোন ম্যারো ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর।
গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টায় তার মরদেহ থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের একটি লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে করে তার মরদেহ বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। সঙ্গে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। পুলিশের একটি টিম বিশেষ নিরাপত্তা দিয়ে দুপুর পৌনে একটায় লাশবাহী ভ্যানটিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে আসেন। যেখানে ড. জহীরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। এই সুপ্রিম কোর্ট ছিলো তার প্রিয় কর্মস্থল। যেখানে তিনি প্রায় ৫১টি বছর কাটিয়েছেন। ছোটাছুটি করেছেন এক বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চে। ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আইনি লড়াইয়ে। কখনো জয়লাভ করেছেন, আবার কখনো হেরেছেন।
জুমার নামাজ শেষে ড. জহীরের কফিন ফ্রিজার ভ্যান থেকে বের করে নেয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের গার্ডেন প্রাঙ্গণে। সেখানে রাখা একটি টেবিলে নামানো হয় কফিন। এরপর খোলা হয় কফিনের ঢাকনা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে ড. জহীরে লাশ দেখার জন্য সুযোগ করে দেয়া হয়। এরপর রাজনীতিবিদ, সাবেক প্রধান বিচারপতিগণ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকগণ, আইনজীবী ও সর্বস্তরের জনগণ ড. জহীরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। এসময় উপস্থিত বিশিষ্টজনরা ড. জহীরের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক স্মরণ করছিলেন। উপস্থিত সকলেই বলছিলেন, ড. জহীর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু পেছনে রেখে গেলেন এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো শেষে উপস্থিত সকলেই শরিক হন ড. জহীরের জানাজায়। জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে মরহুমের একমাত্র সন্তান শামস মুনীর সমবেতদের উদ্দেশে বলেন, “আমি আমার পিতার জন্য গর্বিত। পবিত্র রমজান মাসে কষ্ট করে আপনারা জানাজায় শরিক হয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমার বাবা যদি কোন ভুল করে থাকে তাহলে দয়া করে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।” ড. জহীরের ভাই সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির মরহুমের জন্য সকলের কাছে দোয়া চান। এরপর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিচারপতি, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
এতে সাবেক প্রধান বিচারপতিগণের মধ্যে বিচারপতি কেএম হাসান, বিচারপতি এম তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ও বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান, বিচারপতি এমএ মতিন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, আপিল বিভাগের কর্মরত জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী এবং হাইকোর্টে কর্মরত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন, বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, বিচারপতি সৈয়দ এবি মাহমুদুল হক, বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি জেবিএম হাসান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ অংশ নেন।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এমপি প্রমুখ।