তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কোন সম্পর্ক নেই। গতকাল সচিবালয়ে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে গত শনিবার আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে দেশের ১৫টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক একটি বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এই সরকারের আমলে সংবাদমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য কখনও কাউকে বাধা দিচ্ছে না সরকার। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চেয়ে ১৫ সম্পাদকের বিবৃতির বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৫ জন সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিষয়ে ওয়াকিবহাল না হয়ে, পুরো বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই বিবৃতি দিয়েছেন। কারণ মাহমুদুর রহমানের মতো কলঙ্কজনক ব্যক্তির পক্ষে সাফাই গাওয়া সংবাদপত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আশা করবো তারা আমাদের যুক্তি গ্রহণ করবেন, ভবিষ্যতে মাহমুদুরের পক্ষে আর ওকালতি করবেন না। এতে গণমাধ্যমকর্মীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। বিবৃতি প্রদানকারী ১৫ সম্পাদকের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন রেখে হাসানুল হক ইনু বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি, অশান্তি তৈরিতে উস্কানি দেয়া, সাইবার হ্যাকিং কি অপরাধ নয়? এ ধরনের অপরাধীরা কি আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে? ‘আমার দেশ’ ছাপাতে আইনগত কোন বাধা নেই মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি বলেই ‘আমার দেশ’-এর ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়নি। গণমাধ্যমের তিনটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ওকালতি না করার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশ’ পত্রিকা প্রকাশে আইনগত কোন বাধা নেই। যে পদ্ধতিতে অন্য ছাপাখানা থেকে পত্রিকা প্রকাশ করা যায়, সেই পদ্ধতিতে ‘আমার দেশ’ ছাপা হতে পারে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান সংবাদপত্র জগতে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। সাংবাদিকতার সুযোগ নিয়ে তা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী ‘আমার দেশে’র ছাপাখানায় তল্লাশি চালানো এবং দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের সমপ্রচার সাময়িকভাবে বন্ধের বিষয়ে আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে সরকারের পদক্ষেপের বিশদ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, হ্যাকিং করে বিকৃত তথ্য প্রচার, মিথ্যাচার, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন সব বিষয় প্রচার করার দায়ে ‘আমার দেশ’-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগে। উপযুক্ত ওয়ারেন্ট নিয়েই ‘আমার দেশ’-এর ছাপাখানায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেখানে আপত্তিকর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে দাবি করে হাসানুল হক ইনু বলেন, সেখানে আরও তল্লাশি চালানো হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘আমার দেশ’-এর ছাপাখানাও খোলা হবে না। ‘আমার দেশ’-এর ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়নি। তল্লাশি শেষ না হলে ছাপাখানা খুলে দিতে পারছি না। অন্য ছাপাখানা থেকে তারা পত্রিকা ছাপাতে পারে। অন্য ছাপাখানা থেকে পত্রিকা ছাপাতে হলে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় তা না করায় ‘সংগ্রামে’র ছাপাখানার বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেমন অসীম, দায়িত্বশীলতাও তেমনি অসীম। ‘আমার দেশ’ পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে সেই দায়িত্বশীলতাকে গুরুত্ব দেয়নি। তারা ধর্মীয় উন্মাদনা ও অশান্তিতে উস্কানি দিয়েছে। পত্রিকাটি এবং এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, এর সবগুলো ফৌজদারি আইনে অপরাধের অভিযোগ। দুই টিভি চ্যানেল সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সরকার কোন মামলা করেনি। তাদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা চিঠির জবাব দিয়েছে। জবাব সন্তোষজনক হলে এই চ্যানেল দু’টি আবার সমপ্রচারে যেতে পারবে। আমার জানামতে, তারা সমপ্রচারের শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এ শর্তের ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে আশ্বস্ত হতে না পারছি ততক্ষণ খুলে দিতে পারছি না। এ দু’টি টেলিভিশন চ্যানেলের বিষয়ে ১৫ সম্পাদকের উদ্বেগের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার সঙ্গে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কোন সম্পর্ক নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। সরকার সংবাদপত্র ও আদালতের ওপর কোন হস্তক্ষেপ করছে না, করার অবকাশও নেই। সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম ছাড়াও পিআইডি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।