মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি মানুষকে শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য, মানসিক জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা এবং এসব আহরণ ও আবিষ্কারের অদ্ভুত প্রতিভা দান করেছেন। আরও দিয়েছেন সাধনার বলে বলীয়ান হয়ে অলৌকিক আত্মিক-শক্তি হাসিলের অধিকার। পৃথিবীতে এমন কোন নরনারী নেই যাদের পক্ষে যথাযথ অনুশীলনের দ্বারা প্রয়োজনীয় দৈহিক ও মানসিক উত্কর্ষ লাভ সম্ভব নয়। মানুষ মহান আল্লাহ পাকের প্রদত্ত ক্ষমতা বলে পৃথিবীর বুকে বহু অসাধ্য কাজ সাধন করে যাচ্ছে। কেউ কেউ ধন-সম্পত্তি,মান-প্রতিপত্তি এবং রাজ্য-সম্পদ অর্জনে, কেউ কেউ জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অদ্ভুত আবিষ্কার -উদ্ভাবনে আর অপর কেউ বা আত্মিক সাধনায রত রয়েছেন। আর এই আত্মিক সাধনায উন্নতি লাভ করতে হলে বিশেষ বিশেষ আমলের বিভিন্ন ওজিফা ও দোয়া অন্যতম হাতিয়ার। হাদিসে বলা হয়েছে, একমাত্র দোয়াই তাকদির পরিবর্তন করতে বা বদলে দিতে পারে। এ জন্যই আল্লাহর নবী-রসূলগণ ও খাস মহাসাধক-ওলিরা বেশি বেশি দোয়া করে থাকতেন। কুরআন-হাদিসে দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। দোয়ার আদবগুলো ঠিক ঠিকভাবে আদায় করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। রসূলে পাক (স.), সাহাবাগণ এবং পরবর্তীতে অলি-আউলিয়াগণের দোয়া এবং বিশেষ বিশেষ মুনাজাত আমাদের নজরে পড়ে। এসব মুনাজাত আমাদের পাঠ করা জরুরি এবং প্রয়োজন। তাতে আদব রক্ষা পাবে এবং ভুলও কম হবে। রসূল (স.) নিজে দোয়া করতেন এবং সাহাবাদেরকেও দোয়া শিক্ষা দিতেন। তিনি তাঁর স্ত্রী হযরত আযেশা (রা.) এবং কন্যা হজরত ফাতিমা (রা.) কে দোযা শিখিয়েছেন এবং দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলতও বলে দিয়েছেন। এখানে শুধু রাতদিন কীভাবে জিকির ও ফিকির সম্পর্কিত ওজিফায় লিপ্ত থেকে আল্লাহ ও রসূল প্রেমিক হওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করব। অন্য কোন বিষয়ে নয়। পবিত্র কোরআনুল কারীমে বিশেষ নফল ইবাদত তথা বিভিন্ন ওজিফায় লিপ্ত থাকার দিকনির্দেশনা রয়েছে। ওজিফার সম্পর্ক দিবস এবং রাতের সঙ্গে। দিবসের সঙ্গে সম্পর্কিত ওজিফার সূচনা হয় সূর্যোদয়ের পর ইশরাক আদায় করা থেকে এবং চাশতের নামাজের ওয়াক্ত পর্যন্ত। চাশতের নামাজ আদায় করতে হয় সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুরের পূর্ববর্তী সময়টুকুর মধ্যে। অর্থাত্ সুবেহ সাদিক প্রকাশ পাওয়ার তিন ঘণ্টা পর নামাজ রয়েছে। যেমন, ওজিফার মাধ্যমে দিবাভাগের অপেক্ষা করতে হয় এবং ফজরের নামাজ শেষ করেই সাংসারিক কাজকর্মে লিপ্ত না হয়ে কিছুক্ষণ জিকির ও দোয়া-দুরুদে অতিবাহিত করবে। তারপর সূর্যোদয়ের ঘন্টখানেক পর দু’রাকায়াত নামাজ পড়বে। এ নামাজের নাম ‘সালাতুল ইশরাক’ বা ইশরাকের নামাজ। আর দিবাভাগের এক চতুর্থাংশের পর থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চার রাকায়াত হতে বার রাকায়াত পর্যন্ত নফল আদায় করলে অশেষ সওয়াব হাসিল হয়। এ নামাজ বেশী পড়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে দুই রাকায়াত পড়বে। কথা হলো, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সবকিছুতে নতুনত্ব চায় এবং নতুন কিছু আশা করে। একই বিষয়ে প্রতি বারবার মন বসে না এবং জোর করে বসালেও বিষয়টির প্রতি মন অমনোযোগীই থেকে যায়। সুতরাং দিনের বিভিন্ন সময়ের জন্য বিভিন্ন প্রকার জিকির ও ওজিফা নির্বাচন করা উচিত। যাতে মনে তিক্ততা ও বিরক্তি না আসতে পারে এবং নতুন নতুন ওজিফা ও আমলে নতুন স্বাদ উপভোগ করে। আমরা জানি, আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির ওপর মানুষের পরকালীন মুক্তি নির্ভরশীল। তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উপায় হলো, দুনিয়াতে থাকাকালে আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসার সুপাত্রে পরিণত হওয়া, তাঁর সম্পর্কে মারফতি জ্ঞান হাসিল করা অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করা। আর এ জন্য মানুষ রাতদিন মুরাকাবা-মুশাহিদা করতে পারে।
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক