এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কখনো কোন কিছুতেই ‘রিজিড’ (অনঢ়) ছিলাম না, ব্যক্তি জীবনেও ছিলাম না, এখনো নেই। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনায় বসেই আমরা সব ঠিক করবো। তিনি আরো বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক এটাই আমরা চাই। অনির্বাচিত সরকার আর চাই না। আমি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি গণতন্ত্র, দেশ ও জনগণের স্বার্থে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আলোচনার মাধ্যমেই যে কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ক্ষমতা আমার কাছে কিছুই নয়। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আমি রাজনীতি করি। নীতির প্রশ্নে আমার কাছে কোন আপোষ নেই। বর্তমান বিরোধী দলীয় নেত্রী (খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় থাকতে আমাকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন, আমার বাবার খুনীদের মদদ ও পুরস্কৃত করেছেন। এতো কিছুর পরও শুধুমাত্র গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে তাকে (খালেদা জিয়া) সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছি। আমি সংলাপের আহ্বান জানালেও মনে হয় তার বরফ গলছেই না! উনি ১৯৮৬ সাল থেকে বার বার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকেন যে, দেশে কিছু একটা ঘটবে, আর কেউ তাকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্ষমতায় বসাবেন। এখনো তিনি সেই স্বপ্ন দেখছেন। তবে অসাংবিধানিক ও অনির্বাচিত কেউ নন, সব হবে আমাদের (নির্বাচিতদের) মধ্য থেকে। উনি বুঝছেন না, আবার তত্ত্বাবধায়ক আসলে আরো খারাপ পরিণতি হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় দুর্যোগময় মুহূর্তে সাভারের উদ্ধারাভিযান, আহতদের চিকিত্সা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন কাজে সহযোগিতা করতে ঢাকা অবরোধ ও মহাসমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্য হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে। সরকার তাতে বাধা দেবে না। সাভারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর এখনো সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে। চিকিত্সা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ নানাবিধ কাজে সরকারসহ দেশের সকল স্তরের মানুষ আজ একসঙ্গে কাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে হেফাজতে ইসলাম ও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানাই, কর্মসূচি বাতিল নয়, আপাতত স্থগিত করুন। পরেও করতে পারবেন।
হেফাজতের বিভিন্ন দাবির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন শান্তির ধর্ম ইসলামকে হূদয়ে ধারণ করে সবাই দেশের উন্নয়নের জন্য, জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করি। সরকার আপনাদের দাবিগুলো ইতিমধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এই দাবিগুলোর অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে। কয়েকটি দাবি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই দাবিগুলোর সুরাহা করা যাবে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশের ওলামা-মাশায়েখদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম। এই ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে ধর্মের মান-মর্যাদা যেন কেউ ক্ষুণ্ন করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আপনাদের মনে রাখতে হবে, যেকোন ধরনের হঠকারিতা বা দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড বা বক্তব্যের কারণে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি আমাদের কারো জন্য কাম্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, সাভারে ভয়াবহ ভবন ধসের পর ব্যাপক উদ্ধারাভিযান ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভয়াবহ এই ধসের সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারাভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, দুই হাজার ৪৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, এমন উদ্ধারকার্য সত্যিই পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশ তিন ধরনের উদ্ধারকার্য পরিচালনা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও নিরলসভাবে উদ্ধারকার্য পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতাও জানান।
মূলত সাভারের ভয়াবহ ভবন ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা, উদ্ধার কার্যক্রম, আহতদের পুনর্বাসন এবং হেফাজতে ইসলামের দেয়া ১৩ দফা দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থা তুলে ধরতেই এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে পুরোটাই স্থান পায় বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগের বিষয়টি।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ও মহানবী (সা:) সম্পর্কে কটূক্তি বা কুত্সা রটনার অধিকার কোন ব্যক্তির নেই। এমনকি ধর্মে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারেন না। এটা সকল দেশে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রিয় নবী (সা:) এর প্রতি কুত্সা রটনাকারী ৪ জন ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ব্লগারদের এ ধরনের কার্যক্রম সরকারের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত চলছে। ভবিষ্যতে অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হবে। এ বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সরকার তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে। আলেম ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদী জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলি বর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, শান্তিপ্রিয় এবং নিরপরাধ আলেম ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র, ইমাম, খতিব ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজত সংবিধানে ‘মহান আল্লাহ’র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করার দাবি জানিয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তো সংবিধানে আছে। আমাদের সংবিধান শুরু হয়েছে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে। এটি পবিত্র কোরআনের আয়াত। এর চেয়ে উত্তম আর কোন বাক্য হতে পারে না। আল্লাহ’র উপর পূর্ণ আস্থা আছে বলেই এই সংবিধান পবিত্র কোরআনের আয়াত দিয়ে শুরু হয়েছে।
আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাসে হেফাজতের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে শাস্তি প্রদানের দাবির সঙ্গে সরকারেরও কোন দ্বিমত নেই। আর ধর্মের অবমাননার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে দেশে আইন বিদ্যমান আছে। তিন ধরনের আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে এ ধরনের শাস্তি পর্যাপ্ত না হলে প্রচলিত দণ্ডবিধি ২৯৫ এবং ২৯৮ ধারা সংশোধন করে আরও কঠোর শাস্তির বিধান করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধর্মের নামে এবং ইসলামকে বিকৃত করে সাম্প্রতিককালে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা কীভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে এবং রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পদ ধ্বংস করেছে তা দেশবাসী দেখেছে। তারা গ্রেফতারকৃত সকল আলেম, ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র, ইমাম খতীব ও তৌহিদী জনতার মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের জানা মতে, কোন আলেম-ওলামা বা মাদ্রাসা ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়নি। যারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরসহ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে। এরপরও কোন নির্দোষ আলেম গ্রেফতার হয়ে থাকলে হেফাজত যদি তালিকা দেয় তবে অবশ্যই সরকার তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
মসজিদের নগরী ঢাকাকে ‘মূর্তির নগরী’তে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করার হেফাজতের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ঐতিহ্য ও কৃষ্টি কালচারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এগুলো নির্মাণ করা হয়। আর সৌদি আরবেই সবচেয়ে সুন্দর ও চমত্কার ভাস্কর্য রয়েছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা সঠিক নয়। তবে সরকার কোন ধরনের অশ্লীল ভাস্কর্য নির্মাণ করতে দেবে না।
ইসলাম বিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার হেফাজতের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারই সর্বপ্রথম শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে যেখানে মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। নারী নীতির যে সব অংশ ইসলামের বিধানাবলীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হবে সেগুলো এ সরকার কোন অবস্থাতেই বাস্তবায়ন করবে না। নারীনীতির সংশোধনীতে তা উল্লেখ করা হয়েছে। আর ধর্মহীন, নীতি-নৈতিকতাবিহীন শিক্ষানীতি এ সরকার কখনোই সমর্থন করে না। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্মের বা পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন নীতি বা আইন প্রণয়ন করা সরকারের উদ্দেশ্য নয় এবং তা করাও হয়নি। ইসলাম নারীদের মর্যাদা এবং যথাযথ অধিকারদানে বিশ্বাসী। সমাজের বিভিন্ন বঞ্চনা ও অবিচার থেকে নারীদের রক্ষা করার জন্য নারীনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। আর মনে রাখতে হবে, ইসলাম ধর্ম প্রথম গ্রহণ করেছিলেন একজন নারী বিবি খোদেজা। আর ইসলাম ধর্মের প্রথম শহীদও বিবি সুমাইয়া। ইসলাম ধর্মেই নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার দেয়া হয়েছে।
হেফাজতের অন্যান্য দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ যদি স্বেচ্ছাকৃত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রেডিও, টেলিভিশন বা অন্য কোন প্রচার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয় তা হলে তার বিরুদ্ধে যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। আর দাড়ি-টুপি থাকলেই কেউ রাজাকার নন। আসলে রাজাকার বুঝাতে কেউ এধরনের চিত্র তুলে ধরেন যা মোটেও ঠিক নয়। আর আওয়ামী লীগের মধ্যেই সবচেয়ে দাড়ি-টুপিওয়ালা বেশি আছেন এবং নামাজ বেশি পড়েন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপ প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, গাড়ি-বাড়ি-যানবাহনে আগুন, ভাংচুর করা হচ্ছে, ঘুমন্ত ড্রাইভারকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এমনকি প্রায় এক হাজার যাত্রীকে হত্যার জন্য রেললাইনের ফিসপ্লেট পর্যন্ত খুলে ফেলা হয়েছে। ড্রাইভারের সতর্কতার জন্য এতো জীবন বেঁচে গেছে। তিনি বলেন, বিরোধী দল আন্দোলনের নামে এমন ধরনের অমানবিক কাজ যাতে বন্ধ করেন সেজন্য সংলাপের কথা বলেছি। আমার কাছে ক্ষমতা বড় নয়। মানুষের জন্য রাজনীতি করি। দেশের মানুষের জন্য আমি কিছু করে যেতে চাই। বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক দাবি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়কের মতো বীভত্স অবস্থায় আর ফিরে যেতে চায় না। কেন বিরোধী দলীয় নেত্রী তা আবার চাচ্ছেন, তা জানি না। ২০০৭ সালে তিনি তার অতি পছন্দের মইনকে ৯ জনকে ডিঙ্গিয়ে সেনা প্রধান, জাতিসংঘ থেকে এনে ফখরুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করেন এবং ইয়াজউদ্দিন তো তার দলেরই লোক ছিল। কিন্তু তার প্রিয় ব্যক্তিরাই ক্ষমতায় এসে তাকে (খালেদা জিয়া) জেলের ভাত খাইয়েছেন, দু’ছেলেকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে দেশ ছাড়া করেছেন। সেই অবস্থা কী বিরোধী দলীয় নেত্রী আবার চাচ্ছেন? আগের তত্ত্বাবধায়ক মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন। এখন তো একজন নিজেই মাইনাস হয়ে আছেন। ওই ব্যবস্থা আসলে তার ভাগ্যে আবারো কী ঘটবে তা কে জানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তো এমনিতেই খরচের খাতায় রয়েছি। কিন্তু জীবনের ভয় আমি করি না। ২১ আগস্টসহ বার বার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহ’র রহমতে বেঁচে আছি এবং ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষের সেবা করতে পারছি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে কীভাবে নির্বাচন হয়? নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিসভার বৈঠক ও সংসদীয় অধিবেশন বসে না। শুধুমাত্র রুটিং ওয়ার্ক করতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কী চান আবারো সেই দমবন্ধকর পরিবেশ দেশে আবার আসুক? ওই পরিবেশ আসলে আপনারা আরো ভাল করে টকশো করতে পারবেন। আর আমরা জেলে যাব, হয়তো মরেও যাব। কিন্তু তাতেও আমরা ভয় করি না। তিনি বলেন, দেশের জনগণ তার সাংবিধানিক ভোটের অধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করে ফলাফল পাবে, সেটাই আমরা চাই। দেশে গণতন্ত্র কার্যকর না হলে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক, অনির্বাচিত আর কাউকে আমরা চাই না।
সাভারের ভয়াবহ ভবন ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মলনের শুরুতেই নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আহতদের চিকিত্সার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা উদ্ধার কাজ শুরু করি। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, ফায়ার ব্রিগেড, সিভিল ডিফেন্স, প্রশাসন, চিকিত্সক-নার্স, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ স্থানীয় জনগণ জীবিত ও নিহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। এ পর্যন্ত জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ জনকে। এখন পর্যন্ত ৪৯০ এরও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুনর্বাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে এক হাজার লোকের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আহতদের জন্য যতদিন প্রয়োজন চিকিত্সার সব খরচ সরকার থেকে বহন করা হবে। জীবন চালানোর মতো এককালীন সাহায্য দেয়া হবে, মৃতদের পরিবারকেও এককালীন সাহায্য দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে এটাই এখন পর্যন্ত বৃহত্ উদ্ধার কার্যক্রম। এর আগে তাজরিন গার্মেন্টস, স্পেকটার্ম গার্মেন্টসসহ এ ধরনের দুর্ঘটনার পর জীবিতদের উদ্ধারের সংখ্যা ছিল খুবই কম। আমি দুর্ঘটনার পর নির্দেশ দিয়েছিলাম, একটি প্রাণের অস্তিত্ব থাকা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করতে হবে। কর্তব্যরত সকলের অক্লান্ত চেষ্টার মাধ্যমেই এ বৃহত্ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এখনো পুরোদমে উদ্ধার কাজ চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কর্মীরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিধ্বস্ত ভবনের মালিক, গার্মেন্টস মালিক, প্রকৌশলীসহ দোষীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সমগ্র জাতি দল-মতের ভেদাভেদ ভুলে যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে তাতে আবারো প্রমাণ হয়েছে, আমরা একটি মানবতাবাদী জাতি। প্রধানমন্ত্রী তার আহ্বানে হরতাল প্রত্যাহার করায় বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে আবারো ধন্যবাদ জানান।
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক