‘আসুন বসি’

‘আসুন বসি’

বিরোধী দলকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, বিরোধী দলের দাবি নিয়ে সংসদ বা সংসদের বাইরে আলোচনা হতে পারে। তবে নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে সংসদে বসেই আলোচনা করা ভাল। গতকাল গণভবনে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা বসি। বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধান করি। আপনারা যেখানে বসতে চান আমরা সেখানেই বসতে রাজি। তবে আমি মনে করি পার্লামেন্ট সবচেয়ে ভাল জায়গা, নিরপেক্ষ জায়গা। আসুন বসে যে কোন সমস্যা সমাধান করি। দেশ শান্তিতে থাকুক, দেশের মানুষ নিরাপদে থাকুক সেটা আমরা চাই। হরতাল ডেকে মানুষ হত্যা করবেন না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেটা ভাল হয়, সেটাই করি। অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে তার আগের অবস্থানই তুলে ধরেন। আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রেক্ষিতে গতকাল প্রধান বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি আগে পরিষ্কার হলেই তারা আলোচনায় বসবেন।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই জয়ী হবে। পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবে হবে। দেশের গণতন্ত্র ধারা বহাল থাকুক, সেটা আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিরোধী নেত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, সংসদে আসুন, হরতাল পরিহার করুন। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করুন, সেটাই আমরা চাই। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী স্পিকার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, আবারও বিরোধী দলীয় নেতাকে বলবো, তিনি যেন পার্লামেন্টে আসেন। আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। এখন স্পিকার একজন মহিলা। প্রধানমন্ত্রী মহিলা। বিরোধীদলীয় নেতা মহিলা। সংসদের উপনেতা মহিলা। বিরোধীদলীয় নেতাও একজন নারীকে উপনেতা নির্বাচিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। তিনি পার্লামেন্টে আসুক। তিনজনের একসঙ্গে অন্তত একটা ছবি থাকুক। নারীর ক্ষমতায়নে আমরা যে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি তা সবাই দেখুক।
সাভারের ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধার কাজে ধীরগতি ও লাশ গুমের বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন। এসব বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার কাজ এবং একসঙ্গে এত জীবন্ত মানুষকে উদ্ধার করা পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে খবর পাই। ২০ মিনিটের মধ্যেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। তিনি কি করে জানলেন উদ্ধারকাজ দেরি হয়েছে। তিনি তো ঘুম থেকেই ওঠেন দেরি করে। প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান ও সংসদ অধিবেশন চালু রাখা নিয়ে খালেদার অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, শপথ এজন্য হয়েছে যে, যত তাড়াতাড়ি শপথ অনুষ্ঠান শেষ করে দায়িত্ব দেয়া যায় ততই দেশের জন্য মঙ্গল। তাছাড়া সংসদ অধিবেশন চালু রাখা হয়েছে উদ্ধারকাজসহ সার্বিক বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার জন্য।

সৌজন্যেঃ মানব জমিন
নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক সমাবেশে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন,  যেখানে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন সেখানেই আদমজী জুটমিল ছিল। এ মিলে ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিল। এক কোটি মানুষ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তা বন্ধ করে শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরেছেন। ক্ষমতায় এলে আপনারা বন্ধ করেন। আমরা বন্ধ করি না, চালু করি। লাশ গুমের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাশ ঘুমের অভিযোগ করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো সাভারের ঘটনা ফলাও করে প্রচার করেছে। আমরা লাশ গুম করিনি। আমাদের কাছে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক।
সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্পেকট্রামসহ অতীতের বিভিন্ন দুর্ঘটনার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা যখন উদ্ধারকাজে ব্যস্ত বিএনপি তখন তাদের লোকজন দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ব্যস্ত ছিল।
বিরোধী দলের নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ওপর ভরসা রাখুন। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় বসবে। ভোটের অধিকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। এটা জনগণের হাতে। প্রেসিডেন্ট সব রাজনৈতিক দলকে ডেকেছিলেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। দেশে ৫ হাজারের বেশি নির্বাচন হয়েছে। প্রত্যেকটি নির্বাচন হয়েছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না। তাদের হাতে আইনশৃঙ্খলাসহ সবকিছু থাকবে। বদলিসহ যে কোন ক্ষমতা দেয়া হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছেন, তারা তিন মাসের জন্য এসে নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। তিন মাসের স্থলে দুই বছর থেকেছেন। সরতেই চান না। যেন মনে হয় গ্লু দিয়ে আটকিয়ে গেছেন। বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আমাকে তারা জেলে দিয়েছিলেন। তার ছেলেদের ধরে উত্তম মাধ্যম দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয়। রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করা হয়। সেই পরিস্থিতি আমরা চাই না। পৃথিবীর প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবে হবে।
আওয়ামী লীগের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কাজী জাফরুল্লাহ, সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর