প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ দলীয় জোট ও বাম সংগঠনগুলোর হরতাল আহ্বানের সমালোচনা করে বলেছেন, এখন হরতাল ভাঙচুরের সময় নয়। এখন একজনের পাশে আরেকজনকে দাঁড়াতে হবে। এই সময় রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর কারও কাম্য নয়। গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। রানা প্লাজার উদ্ধার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক দ্রুত এই উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছে। মানবতার বোধ যে কত প্রবল তার প্রমাণ হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা এই মানবতা বোধকে রুখতে পারে নাই। ভবন ধসের ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তারে সারা দেশে ‘সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, যে যে দলেরই হোক না কেন- অপরাধীকে অপরাধী হিসাবে দেখবে। রানা প্লাজা ধসে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শ্রমিকদের আইনগত সহায়তা দিতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের পাশাপাশি ‘শ্রমিক সহায়তা সেল’ গঠন করা হবে। আমরা শ্রমিক সহায়তা সেল গঠন করব। যাতে শ্রমিকরা ন্যায় বিচার পায়। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেবো। প্রতিটি জেলায় একটি করে স্থায়ী ‘লিগ্যাল এইড অফিস’ স্থাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কার্যালয়কে কেবল আইনি সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না সরকার। বিচারপ্রার্থী জনগণের কল্যাণে এই অফিসকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল হিসেবেও কাজে লাগানোর আগ্রহের কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের চার বছরে নারী-পুরুষ-শিশুসহ প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ মানুষ সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা পেয়েছে। সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ১৯ হাজার দশটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার প্রক্রিয়াকে স্থায়ীরূপ দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরে আদালতের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। ঢাকা সিটি করপোরেশনকে যেমন দুই ভাবে ভাগ করা হয়েছে। তেমনি আদালতকে দুই বা চার ভাগে ভাগ করার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। অন্যদের মধ্যে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আহতদের দেখতে হাসপাতালে
প্রধানমন্ত্রী সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় আহতদের দেখতে গতকাল সকালে ন্যাশনাল অর্থোপেডিক হাসপাতাল এবং ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ) পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে রোগী, তাদের আত্মীয়স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আহতদের চিকিৎসার এবং তাদের বর্তমান স্বাস্থ্য অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এ সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইকবাল আরসানাল, হাসপাতালের পরিচালকবৃন্দ ও সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী আহতদের প্রত্যেককে জরুরি ব্যয় নির্বাহের জন্য নগদ ১০,০০০ টাকা ও কাপড় দেন। এছাড়াও সরকার আহতদের চিকিৎসা, খাবার ও পরিবহনের ব্যয় বহন করবে বলে ঘোষণা দেন।