সাভারে ভবন ধস, ১৪২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার

সাভারে ভবন ধস, ১৪২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার


সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধসে পড়া ‘রানা প্লাজা’ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ তলা ভবনের নিচের কয়েকটি তলা দেবে গেছে। উপরের তলাগুলো একটি অপরটিকে চাপা দেয়। ওই ভবনটিতে আড়াই হাজারেরও বেশি গার্মেন্টস কর্মী কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। এ পযন্ত ছয়শ জনের মতো শ্রমিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতের অনেকে অবস্থা গুরুতর। আহতদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সেখানে প্রায় ১০০ চিকিৎসক সকাল থেকে আহতদের বিরামহীন চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সকাল নয়টার দিকে ভবনটি ধসে পড়ে। এরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, র‌্যাব পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যন্য বাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেন। ক্রমে বের হতে থাকে হতাহতের ভয়াবহ চিত্র। যাদের ভেতর থেকে জীবিত বের করা হচ্ছে তারা জানিয়েছেন ভেতরে আরও অনেক মানুষ আটকা আছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সেনা বাহিনীর ৪টি ইউনিট উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছে। বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। সকাল থেকে দুর্ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করায় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভিড়ের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় অসুবিধা হচ্ছে। উৎসুক মানুষকে রাস্তা থেকে সরাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক দফায় লাঠিচার্জও করে। নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরি এবং উদ্ধার কাজ মনিটরিং করতে ঘটনাস্থলে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। ভবন ধসের পর পরই ১৮ দলের ডাকা হরতাল সাভারে শিথিল ঘোষণা করা হয়। দুপুরের পর ঢাকা জেলায় হরতাল শিথিলের ঘোষণা দেয়া হয়।
নির্মাণ বিধি অনুযায়ি ভবনটি তৈরি করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া গতকাল ওই ভবনে ফাটল দেখা দেয়ার পর নিচের বিপনী বিতান ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু বাধা উপেক্ষা করে উপরের তলার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীগুলো চালু রাখা হয়। সকালে শ্রমিকদের জোর করে ভবনে উঠানো হয় বলে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় ভবন মালিক পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সুহেল রানা ভবনেই ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তাকে স্থানীয় এমপি মুরাদ জং উদ্ধার করে নিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল ৯টায় ভবনটি ধসে পড়ে। মাটির নিচে একেবারে ধেবে গেছে নিচের কয়েকটি তলা। স্থানীয়দের দাবি ধসে পড়ার সময় ভবনের ভেতরে কমপক্ষে ৫ হাজার শ্রমিক ছিল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভেতরে থাকা লোকজনের বেশিরভাগই ভেতরে আটকা পড়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক। তাদের খোঁজে আহাজারি করছেন স্বজনরা। এমুহূর্তে ভবনটি ঘিরে রেখেছেন ব্যবসায়ী, শ্রমিক, শ্রমিকদের আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয়রা। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বহুতল এ ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ভবনে ৪টি গার্মেন্ট সহ বহু প্রতিষ্ঠান ছিল। ভবনে ফাটল দেখা দিলে আতঙ্কে ওই ভবনের ৪টি পোশাক কারখানা ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। আজ সকালে ভবন থেকে মালামাল সরাতে যান প্রায় সবগুলো দোকান ও প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এছাড়া গার্মেন্ট সকালে খুলে দেয়া হলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। এখানে থাকা কারখানাগুলো হচ্ছে- তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ তলার প্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার প্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড। দ্বিতীয় তলায় ছিল বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সাভার শাখা। নয় তলা ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধনী সামগ্রী ও কাপড়ের মার্কেট। গতকাল সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ৩য় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড কারখানার ভিতরের পিলারেও ফাঁটল দেখা দেয়।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর