দেশে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে আজ বুধবার নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে কয়েকটি সীমিত রুটে আজ থেকে চালু হচ্ছে স্মার্ট ও আধুনিক ছোট্ট ট্রেন ডেমু (ডিজেল ইলেক্ট্রিক মাল্টিপল ইউনিট কমলাপুর স্টেশন থেকে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর রুটে এবং চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কাছাকাছি কয়েকটি রুটে চলাচল করবে এ ট্রেন। ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে চীনের তৈরি ডেমু ট্রেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য মোট ২০ সেট ডেমু ট্রেন চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ৮ সেট ডেমু ট্রেন দেশে এসে পৌঁছেছে। আপাতত এগুলো দিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন এ ট্রেন সেবার। আগামী জুন মাস নাগাদ বাকি ট্রেনগুলো এসে পৌঁছলে পর্যায়ক্রমে সেবা সম্প্রসারিত করা হবে।
রেল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ট্রেনে তিনটি বগি আছে। সামনের এবং পেছনের বগিতে চালকের বসার কেবিন আছে। ট্রেনটি সামনে এবং পেছন থেকে চালানো যায়। এ ট্রেনে আলাদা করে কোনো ইঞ্জিনের প্রয়োজন নেই। ১৮০ ফুট দীর্ঘ এ ট্রেনের তিনটি বগিতে তিন শ’রও বেশি যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। তবে আমদানির তালিকায় থাকা বাকি ১২ সেট ট্রেন দেশে পৌঁছলে সেগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে কমিউটার ট্রেন হিসেবে চালানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে এক দিকে সড়কপথে যানবাহনের ওপর চাপ কমবে, অন্য দিকে কমবে যানজট। সূত্রটি জানায়, মোট ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের তাংসাং রেলওয়ে ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেড থেকে ট্রেনগুলো কেনা হয়।
জানা যায়, ডেমু ট্রেনের ইঞ্জিন বা বগি সাধারণ ট্রেনের ইঞ্জিন বা বগির তুলনায় কিছুটা হালকা এবং কম টেকসই। সাধারণ ট্রেনের তুলনায় এর প্রবেশদ্বার ছয় ইঞ্চি উঁচুতে। দরজাগুলোও প্রচলিত ট্রেনের তুলনায় কম চওড়া। যাত্রী ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দুই সেট (ছয় ইউনিট) ট্রেনের বগি সংযোজন করে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশে প্রচলিত ট্রেনের চেয়ে এ ট্রেনের বগির উচ্চতা অন্তত আট ইঞ্চি বেশি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে কমলাপুর, গেন্ডারিয়া, পাগলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া ও নারায়ণগঞ্জ এ ছয়টি স্টেশন রয়েছে। সবকটি স্টেশনেই ডেমু থামিয়ে রেলের কর্মকর্তারা প্ল্যাটফর্ম থেকে দরজার উচ্চতা মেপে দেখেছেন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে দরজার ব্যবধান আড়াই থেকে তিন ফুট। দরজার উচ্চতা সমস্যা দূর করতে স্টেশনগুলোর প্লাটফর্ম সাময়িকভাবে উঁচু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ। জ্বালানি ধারণক্ষমতা ও ইঞ্জিনের কার্যশক্তি কম হওয়ায় ডিইএমইউগুলো ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের রুটে চালানো যাবে না।
সূত্র জানায়, ডেমু ট্রেনগুলো চালানোর জন্য নির্বাচিত পূর্বাঞ্চলের রুটগুলো হলো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-ভৈরব-ঢাকা, ঢাকা-জয়দেবপুর-ঢাকা, চট্টগ্রাম-দোহাজারী-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-লাকসাম-চট্টগ্রাম, লাকসাম-নোয়াখালী-লাকসাম এবং লাকসাম-চাঁদপুর-লাকসাম। পশ্চিমাঞ্চলের ৩টি রুট হলো লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট, লালমনিরহাট-দিনাজপুর-লালমনিরহাট ও লালমনিরহাট-বগুড়া-লালমনিরহাট।