‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে, … তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে।’
জাতীয় সংসদ ভবনের ৪২ বছরের ভালোবাসা ছেড়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে কবিগুরুর এই কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করে শোনালেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদায়ের অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।
‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৩’ পাওয়ায় জাতীয় সংসদ ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট বলেন, “দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে আমি এই মহান দায়িত্ব পেয়েছি। জানি না কিভাবে ইজ্জতের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করবো। তবে দায়িত্ব পালনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা পাবো বলে আশা করি।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “জীবনের ৪২ বছর কেটেছে সংসদ চত্বরে। কখনও ছেড়ে যেতে হবে চিন্তা করিনি। এখন ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। সংসদ আমার আত্মার আত্মীয়। যদি আমার বাসস্থান বঙ্গভবন হয়, তবুও আমি বেশি বেশি সংসদে আসবো। এটা নিয়ে আপনারা সমালোচনা করতে পারবেন না।”
আবদুল হামিদ বলেন, “এই মহান দায়িত্ব পাবো কখনো কল্পনাও করিনি। তবে বড় অসময়ে আমি দায়িত্ব পেয়েছি। অতীতে যেভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি, আগামীতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি আর নির্বাচনে ফিরবো না বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এ ঘোষণা ছিল। তবে এখন আর নির্বাচনে ফেরার সুযোগ থাকলো না। আগামী দিনগুলোতে জনগণের জন্য দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।”
রাষ্ট্রপতি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “মরহুম জিল্লুর রহমানের দায়িত্ব আমার ওপর আসবে, এটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমার অযোগ্যতা সত্ত্বেও আমার ওপর এই মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।”
সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আপনাদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকবে। আপনারা আমার কাছে আসবেন। আমি চেষ্টা করবো আপনাদের জন্য কিছু করার।”
সংসদের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি নিজে কষ্ট করেছি, সংসদের টাকা অপচয় করিনি। আমি কৃপণতা করেছি, এজন্য আমাকে সংসদ সদস্যরা কৃপণ মানুষ বলতেন। আমি এটা হাসিমুখে মেনে নিয়েছি।”
ছাত্রজীবনে দেদারসে টাকা খরচের কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “আমি অর্থ মন্ত্রণালয়কে তিন থেকে চার কোটি টাকা দিয়েছি, যা অন্য স্পিকাররা পারেন নি।”
সংসদ থেকে ৭৫ শতাংশ দুর্নীতি দূর করতে পেরেছেন বলেও উল্লেখ করেন আব্দুল হামিদ।
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাষ্ট্র পরিচালনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সহযোগিতাও চান তার বক্তব্যে।
তিনি বলেন, “এরশাদ সাহেব এখানে আছেন। আমি আশা করবো উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে তিনি আমাকে সহযোগিতা করবেন।”
আবদুল হামিদ এরশাদ ছাড়াও অন্যদেরও সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, “এখানে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন তারাও আমাকে সহযোগিতা করবেন বলে আমি আশা করি।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করেন সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। বক্তৃতা করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, চিফ হুইপ উপাধ্যাক্ষ আব্দুস শহীদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মইনুদ্দিন খান বাদল, হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সংসদ সচিবালয়ের সচিব মাহফুজুর রহমান।
এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আতর আলী, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আব্দুল বারি, দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা আব্দুর রহমান, সিনিয়র কমিটি অফিসার সিরাজুল ইসলাম বাদশা ও প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা প্রণব চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য গত ২৫ মার্চ স্পিকার আবদুল হামিদ স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।