বিএনপি-জামায়াত হরতালের নামে মানুষ খুন করছে

বিএনপি-জামায়াত হরতালের নামে মানুষ খুন করছে


প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত হরতালের নামে মানুষ খুন করছে। মানুষ খুন করাই বিএনপি-জামায়াত জোটের কাজ, দেশের মানুষ এখন আর তাদের চায় না। তারা মানুষ খুন, পুলিশ হত্যাসহ যানবাহনে পেট্রল ঢেলে চালকদের পুড়িয়ে মারছে। ফটিকছড়িতে দেখেছেন কিভাবে আক্রমণ করে হত্যা করেছে তারা। এখন আবারও হুমকি দিচ্ছে সারা দেশে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি নেত্রী যদি মনে করেন তিনি পার পেয়ে যাবেন সেটা হবে না। এসব হত্যাকাণ্ডের দায়ভার বিএনপি নেত্রী ও জামায়াতকে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারা এদেশে তারা খুনিদের পুনর্বাসন করেছিল। আমরা সে হত্যাকাণ্ডের বিচার করে রায় কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও এদেশের মাটিতেই হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। দেশের মানুষ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর দেশ গড়ে তোলা হবে। এজন্য সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এমপি’র সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, রেলপথমন্ত্রী ও কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুল হক মুজিব এমপি, সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এমপি, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, অধ্যাপক আলী আশ্রাফ এমপি, সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট, তাজুল ইসলাম এমপি, নাছিমুল আলম চৌধুরী এমপি, রবিউল মোক্তাদির চৌধুরী এমপি প্রমুখ। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, মেজর জেনারেল অব. সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, কর্মসংস্থান, আইন-শৃঙ্খলা, রেল ব্যবস্থাসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু দিতে আসে, আর বিএনপি-জামায়াত নিতে আসে। সরকারে এসে ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করেছি। গত চার বছর ৬ ভাগের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। গোল্ড রিজার্ভ বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশের রিজার্ভ বর্তমানে ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বাংলাদেশকে আজ শান্তির দেশ হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষানীতিতে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করে সর্বজনীন শিক্ষা চালু করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে বিনামূল্যে বই দেয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ২৭ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে, যা অতীতে কোন সরকার দিতে পারেনি। ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও ১ লাখ ৪ হাজার শিক্ষককে সরকারিকরণ করা হয়েছে। চাকরিজীবীদের বেতন ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। ৭৫ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। জনশক্তি রপ্তানি সরকারিকরণ করে অল্প খরচে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য মানুষের সার্বিক উন্নয়ন করা। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বয়স্ক-বিধবা, দুস্থ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও গ্রামে গ্রামে হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক করে চিকিৎসা সেবাসহ গ্রামের মানুষকে নানান সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশে দারিদ্র্য হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ এখন দু’বেলা খেতে পাচ্ছে। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উন্নীত হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৫৮২টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সুবিধা চালু করে গ্রামের জনগণের তথ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০ হাজার স্কুলে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মোবাইল আমরা পনেরশ’ টাকায় দিচ্ছি। তিনি বলেন, বিএনপির ৫ বছর ছিল জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, বাংলা ভাই ও মানিলন্ডারিং। আমরা বিএনপি নেত্রীর ছেলেদের মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত এনেছি। আরও টাকা ফেরত আনবো। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় আমরা ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে যাই। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে একটি বাতি জ্বালানোর বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। এবার ক্ষমতায় এসে ৩২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাই। বর্তমানে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উন্নয়ন করে ৬৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। তিনি বলেন, মুরাদনগরের শ্রীকাইলে বিএনপির সময় একটি কূপ খনন করে গ্যাস না পেলেও আমরা ক্ষমতায় এসে সেখানে পাশাপাশি দু’টি কূপ খনন করে গ্যাস পেয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ৬ লেনে উন্নীত করা হবে। এছাড়াও তিনি নতুন করে আরও দু’টি মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণের জন্য জাপানের সঙ্গে চুক্তির কথা উল্লেখ করেন।
বিরোধী দলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সময় সারা দেশে ৫৫৯৪টি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আপনার দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছে। আমরা ভোট চুরি করে ফলাফল পক্ষে নেইনি। আগামী নির্বাচনে জয়যুক্ত করে সন্ত্রাসমুক্ত উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখতে এসময় তিনি আগত জনগণের হাত তুলে সমর্থন চাইলে জনতা হাত নেড়ে সমর্থন জানান। বিকালে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা টাউন হলের সভামঞ্চে যাওয়ার আগে ১৩৪৪ কোটি টাকার ২৪টি প্রকল্পের কাজের ফলকের প্রতীকী উদ্বোধন করেন। ৪টা ১৫ মিনিটে শুরু করে ৪টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত ৩৩ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা বিভাগ, ঢাকা-কুমিল্লা সরাসরি রেললাইন নির্মাণসহ কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের ১০টি দাবির বিষয়ে কোন ঘোষণা দেননি।
মুরাদনগরে গ্যাসক্ষেত্র উদ্বোধন ও জনসভা
এর আগে প্রধানমন্ত্রী জেলার মুরাদনগরে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রীকাইল গ্যাসফিল্ডের গ্যাসকূপ খনন ও ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার আন্তঃসংযোগ পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সঞ্চালন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী গ্যাসক্ষেত্রের পাশে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-আল রশীদের সভাপতিত্বে মুরাদনগরে আয়োজিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এবিএম গোলাম মোস্তফা এমপি, মহিলা এমপি জোবেদা খাতুন পারুল, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আউয়াল সরকার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার প্রমুখ। এতে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী, অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি, সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসানসহ কুমিল্লা উত্তরের বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা। পরে তিনি হেলিকপ্টারযোগে ১১টা ৩৮ মিনিটে কুমিল্লা নগরীর ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন এবং ১১টা ৪৫ মিনিটে নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের ফলক উন্মোচন শেষে সোয়া ১২টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এমপির সভাপতিত্বে ওই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট প্রমুখ। এতে বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব এমপি, নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এমিরিটাস রফিকুল ইসলাম, কবি নজরুল পরিবারের সদস্য খিলখিল কাজী, নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক রশীদ হায়দার, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসান প্রমুখ। এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে কুমিল্লার বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর