প্রেসিডেন্ট পদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন এডভোকেট আবদুল হামিদ। প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর মানবজমিনকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দায়িত্বটি তো চ্যালেঞ্জেরই। স্পিকার হিসেবেও আমি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। এখনও করবো। জানিয়েছেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে কখনও প্রেসিডেন্ট হবেন- এমন আকাঙক্ষা ছিল না তার। পরিস্থিতিতে পড়ে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত পদে আসীন হচ্ছেন। তাই সংসদ থেকে তার গন্তব্য এখন বঙ্গভবনের দিকে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে চূড়ান্ত হওয়ার পরই নিয়ম অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করা হবে। এরপরই তিনি চলে যাবেন বঙ্গভবনে। এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙক্ষা আমার কখনওই ছিল না। গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পান এডভোকেট আবদুল হামিদ। এরপর তার পক্ষে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট পদে তিনি একাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ায় তিনিই যে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তা নিশ্চিত হয়ে যায়। এখন কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বাকি। ২৪শে এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশন এ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর সংসদ সচিবালয়ের স্পিকারের কার্যালয়ে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তিনি সংসদ সচিবালয়ের স্পিকারের কার্যালয়ে বসে দায়িত্ব পালন করছেন। ২৪শে এপ্রিলের পর তিনি আগামী দিনগুলো কাটাবেন বঙ্গভবনে। তবে মাঝে মধ্যে সংসদ সচিবালয়ে আসবেন বলে তিনি তার সহকর্মীদের জানিয়েছেন। কারণ সংসদ ঘিরে তার রয়েছে আলাদা দুর্বলতা। দু’বার স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি ডেপুটি স্পিকারেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই সংসদ সচিবালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী তার অতি পরিচিত। এদিকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা কিছুটা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। তাই সংসদ সচিবালয়ে স্পিকারের কার্যালয়ে থাকা অবস্থায় অনেকে আসছেন শুভেচ্ছা জানাতে। গতকাল দুপুর থেকেই মন্ত্রী-এমপিরা একে একে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে যান। কেউ ফুল নিয়ে আবার কেউ মিষ্টি নিয়ে যান। তার দীর্ঘদিনের অনেক সহকর্মী আবার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ নিয়েছেন। আবদুল হামিদও তাদের সেই আবদারে সায় দিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই প্রতিবেদকও তার সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ দেখালে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের বৈঠকের পর স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। ওদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে যারাই শুভেচ্ছা জানাতে গেছেন তাদেরকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে।
শপথের প্রস্তুতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের
স্টাফ রিপোর্টার দীন ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন অর্থাৎ ২৪শে এপ্রিলকে মাথায় রেখে তার পর দিন নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের প্রস্তুতি শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। যদিও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বিদেশে সরকারি সফরে থাকাকালীন প্রেসিডেন্টের শপথের সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। শপথের প্রস্তুতি ঠিকভাবে হবে কি না এখন শুধু তা দেখভাল করবেন মন্ত্রি পরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকেই মনিটরিং করেছেন। প্রেসিডেন্টের শপথ সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। ওদিকে সংবিধান অনুসারে এমপিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। ৯ই এপ্রিল নির্বাচন কমিশন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, ২৯শে এপ্রিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ২১শে এপ্রিল। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে অর্থাৎ গতকাল পর্যন্ত মাত্র একটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তাই একটি মনোনয়নপত্র আজকে পরীক্ষা করে দেখবে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৪শে এপ্রিল বিকাল ৪টা। একাধিক প্রার্থী না থাকায় ২৪শে এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদুল হামিদ এডভোকেটকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে। ওই বিষয়টি মাথায় রেখে আগেভাগেই ২৫শে এপ্রিল বেলা ১১টায় শপথের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পুরোপুরি প্রস্তুত। এর আগে গত ১৩ই মার্চ আবদুল হামিদকে প্রথম ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন আবদুল হামিদ। ওদিকে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ওই হিসেবে আগামী ১৯শে জুনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে পদটি শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে, তাহা পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট সরাসরি ভোটে নয়, সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশও অস্থিতিশীল। এমন অবস্থায় দলের প্রতি অনুগত এবং অঙ্গীকারবদ্ধ আবদুল হামিদকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। ওই হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে নতুন প্রেসিডেন্টের আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। কারণ সংবিধানের ৫০(১) অনুসারে প্রেসিডেন্ট কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত হচ্ছে- প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
২০তম প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ
সংসদ রিপোর্টার জানান, দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন এডভোকেট আবদুল হামিদ। তিনি অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আবদুল হামিদকে মনোনয়ন দেয়ার পর তার পক্ষে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আবদুল হামিদের নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। প্রস্তাবে সমর্থন করেন উপদেষ্টা পরিষদের অপর সদস্য আমির হোসেন আমু। বৈঠক সূত্র জানায়, আবদুল হামিদকে প্রেসিডেন্ট পদে সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এ পদে গতকাল তার পক্ষেই একমাত্র মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়। মহাজোট বা অন্য কোন দলের পক্ষে কেউ এ পদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র নেননি। আজ মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ২৪শে এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। একক প্রার্থী হওয়ায় এদিন নির্বাচন কমিশন আবদুল হামিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবে। ফলে ২৯শে এপ্রিল নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগেই শপথ নিতে পারেন দেশের ২০তম প্রেসিডেন্ট।
গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের পর সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে স্পিকার আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বিকালে তার পক্ষে এই মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। বৈঠকে সামপ্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিরোধী দলের সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিষয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে যে যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার গঠনের বিষয়ে বিভন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে এরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এখন প্রস্তাব দিচ্ছেন তারা তো একটি নির্বাচনও করতে পারেননি। তারা এখন কিভাবে প্রস্তাব দেন? বৈঠক শেষে সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের জানান, সংসদীয় দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে আবদুল হামিদকে দলের প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। এদিকে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশনে যায়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, আবদুল মতিন খসরু ও ফজলে রাব্বী মিয়া। তারা আবদুল হামিদের নামে চারটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। বিকালে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেন।
বৈঠকে স্পিকার নির্বাচনের বিষয়টি এলেও এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি।
বৈঠকে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নাজমা আকতার স্পিকার নির্বাচিত করার প্রসঙ্গ তোলেন। এ সময় সংসদ নেতা বলেন, একজন সদস্যকে অবশ্যই জানতে হবে কখন স্পিকারের প্রসঙ্গ আনা উচিত। কারণ, আবদুল হামিদকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দেয়া হলেও স্পিকারের পদটি এখনও শূন্য হয়নি।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ এবং অন্য দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে আবদুল হামিদকে সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মহাজোট থেকে আর কেউ প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হচ্ছেন না।
তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এডভোকেট আবদুল হামিদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেন। এর আগেও তিনি নীতির প্রশ্নে কোন আপস করেননি।
নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংসদে সংসদীয় দলের সভায় সকল সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে আবদুল হামিদ এডভোকেটকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। আবদুল হামিদ একজন যোগ্য ব্যক্তি। তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মহল বক্তব্য-বিবৃতিতে তার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ক্লান্তিলগ্নে এমন একজন লোকের পক্ষে আমরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি যিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। স্পিকার হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন তিনি।
একজন আবদুল হামিদ: ১৯৪৪ সালের ১লা জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। তার পিতা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতা তমিজা বেগম। তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে মানবিকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি নেন। ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করার পর কিশোরগঞ্জ বারে আইন পেশায় যোগ দেন আবদুল হামিদ। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবার জেলা বার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬১ সালে কলেজে থাকা অবস্থাতেই যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। একপর্যায়ে তাকে কারাগারেও যেতে হয়। গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ সাব ডিভিশনের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ। ১৯৬৬ থেকে ৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। এরপর দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের ১৩ই জুলাই থেকে ২০০১-এর ১০ই জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১-এর ২৮শে অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে আবদুল হামিদ তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।