দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। রাষ্ট্রপতি পদে আর কোন প্রার্থী না থাকায় আজ সোমবার তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করলো ইসি। রবিবার তার পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করে।
এ বিষয়ে গতকাল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা করা হবে। মনোনয়ন পত্র জমাদানের শেষদিন রবিবার পর্যন্ত চারটি মনোনয়ন পত্র বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে। যার সবগুলোই আবদুল হামিদের পক্ষে। মনোনয়ন পত্রগুলো সোমবার বাছাই করা হবে। প্রার্থী মাত্র একজন হওয়াতে মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই করে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করার ইঙ্গিত দেন সিইসি।
গতকাল বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
পরে জাতীয় সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজের নেতৃত্বে হুইপ সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সাবেক আইন মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বী মিয়া নির্বাচন কমিশনে যান। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে আবদুল হামিদের নামে চারটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
মনোনয়ন পত্র নেয়ার পর হুইপ আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদীয় দলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছি।’
পরে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপির নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের হাতে আবদুল হামিদের নামে তিনটি মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এর মধ্যে একটিতে প্রস্তাবক হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সমর্থনকারী হিসেবে তোফায়েল আহমেদের নাম রয়েছে। এছাড়া চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও আ স ম ফিরোজ প্রস্তাবক হয়ে বাকি দুটি মনোনয়ন পত্র জমা দেন যাতে সমর্থনকারী হিসেবে আবদুল মতিন খসরু ও সেগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নাম রয়েছে।
মনোনয়ন পত্র জমাদান শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে দেশ ও জনগণের স্বার্থে দক্ষতার সাথে কাজ করবেন। এর আগেও তিনি নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করেননি। গত ১৯ এপ্রিল প্রথা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় রাষ্ট্রপতি পদে ষ্পিকার আবদুল হামিদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। গতকাল সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতার সভাপতিত্বে সর্বসস্মতভাবে এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।
আবদুল হামিদের বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, তিনি যোগ্য ব্যক্তি। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মহল বক্তব্য-বিবৃতিতে তার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। আবদুল হামিদ ডেপুটি ষ্পিকার, দুবারের ষ্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা ছিলেন উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত দক্ষ। নীতির প্রশ্নে কখনো আপস করেননি। তিনি হচ্ছেন নিবেদিত রাজনীতিবিদ।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে শপথ নেয়ার পরই ষ্পিকার ও তার সংসদীয় আসন শূন্য হবে জানিয়ে তোফায়েল বলেন, এরপর ষ্পিকার নির্বাচনের জন্য সাত দিন সময় পাবো আমরা। গতকাল বেলা তিনটার দিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদসহ আট সদস্যের প্রতিনিধিদল মনোনয়ন পত্র দাখিল করে। প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সরকার দলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, হুইপ আ স ম ফিরোজ, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, হুইপ সেগুফতা ইয়াসমির এমিলি ও গোলাম দস্তগীর গাজী।
সিইসির বক্তব্য
গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রবিকউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) বাছাই করে বৈধ মনোনয়ন পত্র অনুযায়ী আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী একমাত্র প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।’ এক্ষেত্রে আজ সোমবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা করে দেখি। তারপর ৭ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১-এর ৭ ধারায় বলা হয়েছে—নির্বাচনী কর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়ন পত্র পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষার পর একজনের মনোনয়ন পত্র বৈধ থাকলে নির্বাচন কমিশন ওই ব্যক্তিকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন। তবে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র বৈধ থাকলে বৈধভাবে মনোনীত ব্যক্তিদের নাম মনোনয়ন পত্র পরীক্ষার দিন ঘোষণা করবেন। আজ সকাল ১০টায় সিইসির কক্ষে মনোনয়ন বাছাই করা হবে।
উল্লেখ্য, দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান গত ২০ মার্চ সিঙ্গাপুরে একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত ৯ এপ্রিল এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। আগামী ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।