জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, এখন বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে যে, অতীতে বিভিন্ন সময় জাতীয় ভিত্তিক নীল নকশার মাধ্যমে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে কিভাবে গণরায়কে পাল্টে দেয়া হয়েছিল। আগামীতে জনগণের শক্তি এবং রাজনৈতিক সংগঠনকে মজবুত করে ভোটের ব্যবস্থা তথা ভোট গ্রহণের সময় যে কোন অপপ্রয়াসকে মোকাবেলা করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার বিভিন্ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যেসব অপশক্তি অতীতে তত্পর ছিল তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে। আমরা ঐসব বিষধর সাপকে চিনে ফেলেছি। যারা ২০০১ সালে রাজাপুর-কাঠালিয়া নির্বাচনী এলাকাসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন আসনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে জনগণের ইচ্ছাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছিল। সেই সব সাপের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। তখন এলাকায় পেশী শক্তি প্রয়োগ করে যেভাবে সহিংসতা চালানো হয় তা আজ বিশেষভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমরা তখন উদারতার পরিচয় দিয়েছিলাম। শক্তি প্রয়োগ করে তখন এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া যেত। কিন্তু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সে সময় বিরূপ কিছু না ঘটিয়ে ভুল করেছিলাম কি ঠিক করেছিলাম তা ইতিহাস তথা জনগণের বিচার্য বিষয়।
তিনি বলেন, আমরা তখন দলীয় নেতা-কর্মী তথা ভোটারদের উপর সেই নগ্ন হামলা সম্পর্কে পূর্ব প্রস্তুত ছিলাম না। তখন আমাদের বিশ্বাস ছিল একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবশ্যই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। এখনও আমরা আশাকরি যথাসময় দেশে নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের সকল ব্যবস্থা গৃহীত হবে। অতীতের মত বা ২০০১ সালের মত বিশেষ কোন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া ঠিক হবে না। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এ ধরনের ক্ষমতা অর্পণ নির্বাচনকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে এবং ঐসব প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছিল। যার পরবর্তী প্রতিক্রিয়াও ছিল ধারাবাহিকভাবে দেশ-জাতি-গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আমরা জনগণকে এবং রাজনৈতিক শক্তিকে সর্বতোভাবে সংহত করে অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পক্ষে। যারা পেশী শক্তি দিয়ে নির্বাচনকে বা জনগণের রায়কে নিজেদের পক্ষে নিতে চায় তাদের অবশ্যই প্রতিরোধ এবং দমন করতে হবে। তিনি বলেন, আজ ঢাকা শহরে পেশী শক্তি দিয়ে বিরোধী পক্ষকে দমন করার চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে দেশে গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বিরোধী দলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন পর্যন্ত যেভাবে দেশ চলছে তাতে বিরোধী দল করা যাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে।
তিনি বলেন, এমন কোন দিন নেই যে দিন ৪/৫ জন লোক মারা না যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় অনেকের প্রশ্ন তা হলে কি সময়মত নির্বাচন হবে না? এই সংশয়-সন্দেহ-অনিশ্চয়তার অবসান ঘটাতে হবে। চারপাশে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে গণতন্ত্র, অহিংসপথ, ধৈর্য ও সংযমের কথা যেন ভুলে যাওয়ার পরিস্থিতির উপক্রম হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধভাবে অপশক্তিকে প্রতিহত করে জনগণের অধিকার আদায় করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তা যদি অসম্ভব হয় তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। কোন কোন শক্তি বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য উত্তেজনা, উস্কানি, প্ররোচনা দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে কলহ-বিবাদ সৃষ্টি করতে চায়। এ জন্য কোথাও কোথাও সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা আবার মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে দাড়ি-টুপি দেখে আক্রমণ করার নানা অপকৌশল লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোন ধারণা বা ব্যাখ্যার অস্তিত্ব নাই। আমরা সবসময় স্থিতি অবস্থা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তথা সুস্থ রাজনীতির কথা বলে এসেছি। এই বিশ্বাস নিয়ে জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে যেকোন ত্যাগের বিনিময় ভোটের অধিকার বহাল রাখা আবশ্যক। বাংলাদেশের নির্বাচনী বা ক্ষমতার রাজনীতিতে জোটবদ্ধ দলের যে ধারা চলে আসছে তার পাশাপাশি এককভাবে নির্বাচন করারও দৃষ্টান্ত রয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে আমরা হয়তো জোটগতভাবে বা একক দল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব। জনগণ যাকে খুশী তাকে ভোট দিবে। এই অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে সকল রাজনৈতিক দলের এক ও অভিন্ন অবস্থান থাকা বাঞ্চনীয়।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দুপুরে কাঠালিয়া উপজেলা জেপি’র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলীয় কর্মী সভায় বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পার্টির (জেপি) কাঠালিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোঃ এনায়েত হোসেন খসরু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মাহিবুল হোসেন মাহিম, বিশেষ অতিথি জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রিয় কমিটির শিক্ষা ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং জেপি ঝালকাঠি জেলা সভাপতি এডভোকেট মোঃ এনামুল ইসলাম রুবেল, জেপি চেঁচরীরামপুর ইউনিয়ন আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালেক খান, জেপি কাঠালিয়া সদর ইউনিয়ন আহ্বায়ক সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ ফোরকান মিয়া সিকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেপি সাবেক উপজেলা আহ্বায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাসির উদ্দিন শাহজাহান, কাঠালিয়া সদর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন মুন্সি, জেপি উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মজিবুর রহমান দুধা, কাঠালিয়া ইউপি আহ্বায়ক ফোরকান সিকদার, পাটকেলঘাটা ইউনিয়ন জেপি’র আহ্বায়ক আফজাল হোসেন মোল্লা, আওড়াবুনিয়া ইউনিয়ন জেপি’র আহ্বায়ক আব্দুল হাই মাস্টার, ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ সালেহ উদ্দিন আবু, জাতীয় শ্রমিক পার্টির কাঠালিয়া উপজেলা আহ্বায়ক মোঃ জাকির হোসেন মজনু, যুব সংহতির উপজেলা সাবেক আহ্বায়ক মোঃ সেন্টু খান, মোঃ মামুন হাওলাদার, ছাত্র সমাজের উপজেলা আহ্বায়ক এইচ এম এলেন, উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মেহেদী হাসান মিতু পঞ্চায়েত, ছাত্র সমাজের নেতা মোঃ কামাল সিকদার, মোঃ বশির মিয়া, মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ কালাম মিয়া, ছাত্র সমাজের সাবেক উপজেলা সভাপতি মোঃ মামুন হাওলাদার প্রমুখ।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কাঠালিয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সভাপতি সিকদার মোঃ কাজল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ফারুক হোসেন খানসহ ক্লাব সদস্য সাংবাদিকবৃন্দ। এরপর জেপি শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বীনাপনি শাখা অফিস পরিদর্শন কালে উপস্থিত ছিলেন জেপি শৌলজালিয়া ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক নেপাল চন্দ্র হাওলাদার, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু গাজী, ইউনিয়ন যুব সংহতি নেতা মোঃ শিপন মিয়া। এরপর তিনি আমুয়া ইউনিয়ন জেপি অফিস পরিদর্শন করেন। তখন উপস্থিত ছিলেন আমুয়া ইউনিয়ন আহ্বায়ক মোঃ আঃ হাকিম সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ শাহ আলম গোলদার, পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন জেপি যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আয়নাল হক, জেপি নেতা মোঃ সানু, মোঃ শামীম মিয়াসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
আনোয়ার হোসেন এরপর যুক্তরাষ্ট্রে সমপ্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কাঠালিয়া উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও জেপি উপজেলা সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মোস্তফা হোসেন মীরবহর এর আমুয়া গ্রামের বাড়িতে কবর জিয়ারত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মরহুমের ভাই মো. আলতাফ হোসেন মানিক মীরবহর ও মো. মোফাজ্জেল হোসেন রুস্তম মীরবহর এবং ভাইয়ের ছেলে আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জেপির চেঁচরীরামপুর ইউনিয়ন শাখার মতবিনিময় ও কর্মী সভায় বক্তব্য রাখেন। কৈখালীতে এ মতবিনিময় ও কর্মী সভায় ইউনিয়ন আহ্বায়ক মোঃ আব্দুল মালেক খানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেপি ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক ইউপি সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিন সেন্টু, মোঃ মতি খান, জেপি নেতা মোঃ আব্দুল লতিফ, মোঃ আনসার মোল্লা, যুব সংহতির মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
পশারীবুনিয়া বাজারে গণসমাবেশে
ভান্ডারিয়া সাংবাদদাতা কে এম ফজলুর রহমান জানান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের পশারীবুনিয়া বাজারে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ধাওয়া-পশারীবুনিয়া-ইকড়ি সড়ক পুনর্নিমাণ কাজ শুরু উপলক্ষে আয়োজিত শোকরানা-মিলাদ ও দোয়া উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ধাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু ডাকুয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ভান্ডারিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনি জোমাদ্দার, ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহিবুল হোসেন মাহিম, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, সদর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার জোমাদ্দার, ভিটাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা, গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান টিপু, মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন, ইউপি সদস্য ফিরোজ আহমেদ, মাওলানা রুহুল আমীন প্রমুখ। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইকড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বাবুল, সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেস, সমাজ সেবী ইউসুফ আলী আকন প্রমুখ। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গতকাল বিকালে ভান্ডারিয়ার দক্ষিণ শিয়ালকাঠি গ্রামের অধিকারী বাড়িতে শুভেচ্ছা সফরে যান। এসময় তিনি এ গ্রামের হিন্দু সমপ্রদায়ের সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় ও কথাবার্তা বলেন। এ বাড়ির অধিবাসী ডাঃ সমির রঞ্জন অধিকারী, নীল রতন অধিকারী, শিশির অধিকারী, শেখর অধিকারী প্রমুখ তাঁকে স্বাগত জানান।
জিয়ানগরের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গত সোমবার রাতে পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে এক শুভেচ্ছা বৈঠকে মিলিত হন। তাঁর ভান্ডারিয়াস্থ বাসভবনে এ বৈঠকে শতাধিক ব্যক্তিসহ উপস্থিত ছিলেন পত্তাশী ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুল কবির তালুকদার স্বপন, পাড়েরহাটের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম হাওলাদার, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ পান্না মিয়া প্রমুখ। এ সময় জেপি চেয়ারম্যানকে জিয়ানগরের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সৌজন্যেঃ ইত্তেফাক পাবলিকেশন্স লিঃ