আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে। এ জন্য প্রচলিত দণ্ডবিধি পরিবর্তন করে সাজা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে কিছু করছে, তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের অপরাধের অভিযোগে গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে প্রচলিত আইন ও সাজার বিষয় তুলে ধরতে এবং সরকারের অবস্থান জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফের বিকৃতকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা
আইনমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন সংশোধন করে ধর্মীয় আঘাতকারীদের বিরুদ্ধে সাজা বাড়ানোর চিন্তা চলছে। একই সঙ্গে যারা পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফের ছবি মানববন্ধন বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, যে পত্রিকা এই ছবিকে মানববন্ধন বলে প্রচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হরতাল আহ্বানকারীরা হুকুমের আসামি হবে
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ধোঁয়া তুলে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে সরকার। হরতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও করছে…এ জন্য যারা হরতাল আহ্বানকারী, তাদের হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হবে কি না—জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা হরতাল আহ্বান করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধার অভিপ্রায় নেই
আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সবারই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার আছে। যদি তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে, তাদের বাধা দেওয়ার অভিপ্রায় নেই।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড
শফিক আহমেদ বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো বিন্যাসে এমন কোনো কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যা দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহলে এ কার্যটি অপরাধ হবে। আর এ অপরাধ করলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপবিত্র করার বিষয়ে দণ্ডবিধিতে সাজার ব্যবস্থা আছে বলে তিনি জানান। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড। তবে এই দুই ক্ষেত্রেই সাজা বাড়ানোর জন্য আইন সংশোধনের চিন্তাভাবনা চলছে বলে আইনমন্ত্রী জানান।
কমিটিতে দুই আলেম অন্তর্ভুক্ত
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য সরকার গঠিত কমিটিতে দুজন আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।