আগামী ৬ই এপ্রিল ঢাকায় লংমার্চের সমাবেশে ৫০ লাখ লোকের টার্গেট করেছে হেফাজতে ইসলাম। ওইদিন দেশের ৬৪ জেলার সব থানা, ওয়ার্ড, মহল্লা থেকে দলে দলে যোগ দেবেন নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচিতে যেতে ইতিমধ্যে ভাড়া করা হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি ছোট বড় গাড়ি। এসব গাড়ি আগের দিন রাত ১০টার পর থেকে বিভাগীয় শহরের মূল পয়েন্ট থেকে ছেড়ে যাবে। আর কর্মসূচিতে কোন ধরনের বাধা এলে লাগাতার হরতালের ঘোষণার কথা চূড়ান্ত করেছেন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বিষয়টি আমলে দিয়ে গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় দফায় দফায় কওমি আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সরকারের মন্ত্রী ও দায়িত্ব প্রধানরা। এ সময় তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন। বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের নেতারা সরকারের লোকজনকে জানান, অবিলম্বে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির ব্যবস্থা না করলে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি চলবে। কেবল তাই নয়, সরকারের কাছে যে ১৩ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে তার দ্রুত সমাধান চান ইসলামি নেতারা। চট্টগ্রামের হেফাজত ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে সংগঠনটির সব নেতা-কর্মী ৬ই এপ্রিল লংমার্চের কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ ও দেখভাল হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। সব ধরনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে হাটহাজারী মাদরাসায়। লংমার্চ সফল করতে গত এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামের বাইরের হেফাজত নেতারা দলটির প্রধান মাওলানা শফীর সঙ্গে দেখা করছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে আবার চলে যাচ্ছেন দিনে দিনে। চট্টগ্রামের বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে জনমত সৃষ্টিার চেষ্টা করছে হেফাজতে ইসলাম। তারা এসব জেলা শহরের তৃণমূল নেতাদের সেদিন কি করতে হবে সে ব্যাপারে করণীয় জানাচ্ছেন। একজন আহ্বায়ক করে কমিটি হচ্ছে ১০-১৫ সদস্য বিশিষ্ট। ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২টিতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামী ৪ঠা এপ্রিলের মধ্যে অন্যান্য জেলায়ও যাবেন হেফাজত নেতারা। লংমার্চের কর্মসূচিতে জমাতে ছাপানো হয়েছে নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট। এসব লিফলেটে নাস্তিক ব্লগারদের রুখতে দেশবাসী ও ধর্মপ্রাণ লোকদের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। তবে কোথাও যুদ্ধাপরাধের বিরোধিতার কোন বক্তব্য নেই বলে জানান কয়েক জন নেতা। এ বিষয়ে তারা আরও জানান, কর্মসূচিতে জামায়াত নেতা নিজামী, গোলাম আযম কিংবা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে যাতে কেউ কোন ফেস্টুন নিয়ে আসতে না পারেন সেদিকে বিশেষ সতর্কতা থাকবে। হেফাজতে ইসলাম সূত্র জানায়, বর্তমানে জোরেশোরে চলছে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দের ব্যাপক সফর ও গণসংযোগ। আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ৬ই এপ্রিল সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লোকজনকে যাওয়ার বিষয়টি তারা প্রচার করছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলছে লংমার্চের ব্যাপক প্রস্তুতি। এর আগে ২৯শে মার্চ চট্টগ্রাম থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ফয়সাল বিন তাজসহ ৮জন ওই দলের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে বরিশালে প্রচারণা চালাচ্ছেন মাওলানা ফোরকান আহমদ, মীর ইদরিস, হাবিবুল হক বাবুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা। একই ভাবে গতকাল দুপুরে যশোর ও খুলনায় যান দলের অন্যতম নেতা মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মুফতি আবু সৈয়দ, মাওলানা সাখাওয়াতুল্লাহ, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন নানুপরী। কার্যক্রম চালানো হচ্ছে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও। এখানকার বড় একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মুঈনুদ্দিন রূহী। দলীয় সূত্র জানায়, কর্মসূচি থেকে বড় ধরনের কোন কঠোর ঘোষণা যাতে না আসে সে বিষয়ে বৈঠক করতে গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই হাটহাজারী মাদরাসায় যান সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তার সঙ্গে দুপুর ১২টায় আরও যান চট্টগ্রামের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এ সময় তারা প্রায় একঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক চলাকালে কাউকে ছবি তুলতে দেয়া হয়নি। বৈঠকে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ হেফাজত নেতাদের বলেন, “সরকার ইসলাম রক্ষায় বেশ আন্তরিক। ইসলামকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করুক তা কেউই চায় না। যারা ফেসবুক, ইন্টারনেটে আজেবাজে কথা লিখছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা চাই যুদ্ধাপরাধের বিচারে হেফাজত ইসলাম আমাদের সহযোগিতা করবে।” মন্ত্রীর কথা শুনে হাটহাজারী কওমি মাদরাসার একজন আলেম বলেন, “যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। আমরাও চাই এ অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু তাই বলে শাহবাগ আন্দোলনের নামে যারা নবী রাসুলকে নিয়ে অশ্লীল কথা লিখছে তাদের কিছুই হবে না- তা হতে পারে না। এ বিষয়ে সরকারের নীরবতা দেশের আলেম সমাজকে অবাক করেছে।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠক করার বিষয়টি মানবজমিন-এর কাছে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি গতকাল রোববার দুপুরে বলেন, ‘বৈঠক হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে ভাল একটি আলোচনা করেছি। তারা যেসব দাবি পেশ করেছে তা আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন হবে। এ নিয়েও দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। তারা আগামীতে বড় ধরনের কোন কর্মসূচিতে যাবেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা হয় হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সঙ্গে। তার সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তিনি সিলেটে প্রচারণায় ব্যস্ত বলে জানান। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের পরিচালক সাফ বলে দিয়েছেন নাস্তিক ব্লগারদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না হলে হরতাল দেয়া হবে। তবে আমরা কিন্তু কখনওই বলিনি যুদ্ধাপরাধের বিচার না হোক। বলেছি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হোক। কিন্তু তাই বলে কখনও ইসলামকে খাটো করা যাবে না। দেখা যাক, লংমার্চে তারা আমাদের কোন বাধা দেয় কি না। দিলে হরতাল দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে সংগঠন।