গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকমুখী লং মার্চের প্রতি তার দলের সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইসলাম ও রসুলের বিরুদ্ধে কথা বলে গণজাগরণ মঞ্চ সরকারকে দেশের মানুষের ‘শত্রু’ বানিয়েছে।
“গণজাগরণ মঞ্চ করে সরকারের ক্ষতি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই মঞ্চের কারণে এক সূত্রে গেঁথে তারা শক্তি সঞ্চয় করেছে।”
শনিবার চট্টগ্রামের মুসলিম হলে নগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এরশাদ।
মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক দলের নেতা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে নেমেছিল। তাদের প্রত্যাশা ছিল ফাঁসির রায় হবে। তাদের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করেছে।
ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনে নিজের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে সাবেক এই স্বৈরশাসক দাবি করেন, পরে গণজাগরণ মঞ্চকে ‘দলীয়করণ’ করা হয়েছে। পুলিশ বেষ্টনি দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। তাদের [আন্দোলনকারী জনতা] জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।
“এভাবে করে গণজাগরণ হয় না। গণজাগরণ হয়েছিল ’৭০-’৭১ সালে, তার পরে আর কোনো গণজাগরণ হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “তারা [গণজাগরণ মঞ্চ] যেদিন সারাদেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কথা বলেছিল, আমিই একমাত্র রাজনীতিবিদ তার প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি বলেছিলাম তোমরা কে এ কথা বলার? একমাত্র বঙ্গবন্ধুই পারেন পতাকা উত্তোলনের কথা বলতে।”
এরশাদ মনে করেন, এই গণজাগরণ মঞ্চ দেশকে আজ ‘দুইভাগে বিভক্ত’ করেছে। একটি ‘নাস্তিক’ আর একটি ‘মুসলমান’।
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম ও রসুলের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, একারণেই হেফাজতে ইসলামের মত সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।
কোরআন ও রসুলের ‘অবমাননাকারী, নাস্তিক ব্লগারদের’ বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে হেফাজতে ইসলাম আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকমুখী লং মার্চের ঘোষণা দিয়েছে।
দুই নেত্রীকে সমঝোতায় বসার তাগিদ দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা চাইছেন দেশে আবার ১/১১ আনতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, লগি বৈঠার ঘটনা ঘটেছে। আপনি [শেখ হাসিনা], খালেদা জিয়া দুজনই কারাগারে গিয়েছেন। আমাকে দলের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
“তাই নির্বাচনে আসুন। আমার ফর্মুলা মোতাবেক সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করে নির্বাচন দিন।”
নিজের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করে এরশাদ বলেন, তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। তিনি ক্ষমতায় আসলে কারো কিছুই হবে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, “গত ২৫ মার্চ ঢাকায় উড়াল সেতু উদ্বোধনের সময় আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম ভালো কাজ করুন আমি আপনার পাশে থাকব। তবে জাতীয় পার্টিও ক্ষমতায় যেতে চায়। জাতীয় পার্টি কোন দলের সরকার গঠনের মই হিসেবে ব্যবহার হবে না।”
অনেকে তাকে মহাজোট ছাড়ার তাগিদ দিচ্ছেন উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, মহাজোট হয়েছিল পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করতে। পাঁচ বছর পর মহাজোট আর থাকবে না।
“আমি বুঝব কখন মহাজোট ছাড়তে হবে। বিষয়টি আমার উপর ছেড়ে দেন।”
“যদি আমি মহাজোট ছেড়ে দিই তাহলে তাহলে কি সরকারের পতন হবে?” এ প্রশ্নও রাখেন জাতীয় পর্টির চেয়ারম্যান।।
দেশের হিন্দু সম্প্রদায়সহ জনগণের নিরাপত্তা দিতে সরকার ‘ব্যর্থ’ হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এরশাদ বলেন, বর্তমানে হিন্দুদের মন্দির ভাঙ্গা হচ্ছে। রামুতে হামলা হয়েছে। বিএনপি, জামাত, আওয়ামী লীগ যে দলই মন্দির ভাঙ্গায় জড়িত থাকুক না কেন সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
নগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সোলায়মান আলম শেঠের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, জিয়া উদ্দিন বাবলু, তাজুল ইসলামসহ চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দ।
পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সোলায়মান আলম শেঠকে চট্টগ্রাম নগর কমিটির সভাপতি হিসেবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।