সবার অংশগ্রহণে আসন্ন নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছেন, অবাধ সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পথ ও পন্থা খুঁজে বের করার এখনই সময়। চলমান অস্থিরতা নিরসন ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সমঝোতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গঠনমুলক সংলাপ আয়োজনের তাগিদও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল ইউএসএআইডির উপ-প্রশাসক ডোনাল স্টেইনবার্গের ঢাকা সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা (জিএসপি) বহাল রাখার বিষয়টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। গুলশানের আমেরিকান সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও সফররত ইউএসএআইডি ওয়াশিংটন প্রতিনিধি দু’দেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি এবং তার সরকার উদ্বিগ্ন জানিয়ে ড্যান মজিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চায়। এজন্য তার সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ দেশে গণতন্ত্র থাকতেই হবে। এটা বাঙালিদেরই এক বৈশিষ্ট্য। এখানে যখন অগণতান্ত্রিক শাসন থাকে… তখন তা মোটেও সুখের হয় না। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হয়ে চলবেই।’
বাংলাদেশে সহনশীলতা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আর বেশি সহনশীলতা দেখতে চায় জানিয়ে সফররত ইউএসএআইডির প্রতিনিধি ডোনাল স্টেইনবার্গ বলেন, একটি সহনশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে সমর্থন করি। বাংলাদেশকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিরক্ষায় অনেক বেশি অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের অংশিদারিত্বের শক্তিশালী ভিত্তি কামনা করেন। গত ২৬শে মার্চ তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসা এ কর্মকর্তা গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। এ সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছাড়াও ইউএসএআইডি’র মিশন পরিচালক রিচার্ড গ্রিন ও মার্কিন দূতাবাসের প্রেস অফিসার ক্যালি এস ম্যাককার্থি উপস্থিত ছিলেন। ইউএসএআইডি’র উপ-প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলেই চার বছরে উন্নয়ন সহায়তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১১ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেয় আর ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে এ সহায়তা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে আশা করে করে তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র ও সুশাসন, দুর্যোগ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ সহায়তা চলমান রয়েছে। তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা, ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিবাহ হ্রাসের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হার কমানো ও খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জনে উন্নতির জন্য বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেন তিনি। নারী ও শিশু পাচার রোধে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে জানিয়ে ইউএসএআইডি’র প্রতিনিধি বলেন, এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে। ইউএসএআইডির মিশন পরিচালক রিচার্ড গ্রীন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ তহবিলে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধ। বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে অবশ্যই অগ্রগতি দেখাতে হবে।
জিএসপি সুবিধা হারালে নেতিবাচক বার্তা যাবে: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা হারালে দেশ সম্পর্কে বিশ্বের ব্যবসায়ীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। তবে এ অবস্থা তিনি প্রত্যাশা করেন না বলে জানান। গতকাল ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ে (ইউএসটিআর)-এর জিএসপি সংক্রান্ত শুনানির কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত বলেন, শুনানির পর যদি বাংলাদেশ বাদ পড়ে তাহলে এটা হবে সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্যের উন্নয়নে শুল্ক ও কোটা সুবিধা প্রদানের যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতেও প্রভাব পড়বে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ২৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য জিএসপি সুবিধা পেয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, গতকাল (মধ্যরাতে) ওয়াশিংটনে জিএসপি সংক্রান্ত অভিযোগের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল শুনানিতে অংশ নিয়েছে। এর সিদ্ধান্ত আগামী মে অথবা জুনে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।