মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। স্বাধীনতার ৪২তম বার্ষিকী। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের সোনালি দিন আজ। স্বাধীনতার বাঁধনহারা আনন্দে, উৎসবে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। যাদের রক্তে অর্জিত এই দেশ সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিপাগল বাঙালি। নানা আয়োজনে এবার পালিত হচ্ছে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অধিকারহারা শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে শুরু হয় গণহত্যা। নির্যাতন, লুট আর পৈশাচিকতায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি সেনারা। স্বাধীনতাকামী বাঙালি প্রবল মনোবল নিয়ে গড়ে তোলে প্রতিরোধ। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অবশেষে আসে মহান স্বাধীনতা। বাঙালি ছিনিয়ে আনে লাল-সবুজের বিজয়। অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পুরো জাতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করবে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের। উৎসবের আনন্দে পালিত হবে স্বাধীনতার বার্ষিকী। শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি স্মরণ করবে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালিত হবে নানা কর্মসূচি।
প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোক সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট এডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দেবেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ও সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে বিশিষ্ট শিল্পীগণ কর্তৃক দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন এবং ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও দেশের সর্বত্র মিলনায়তনে, উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে আছে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী। পৃথক বাণীতে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ভাষার দাবিতে একাত্ম হয় জাতি। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬৬-এর ছয় দফা, আর ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে সামরিক শাসক আইয়ুব শাহীর গদি। ’৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় দেশ শাসনের ম্যান্ডেট। তারপরও ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করেন ইয়াহিয়া খান। বাঙালির হাতে শাসনভার দেয়ার পরিবর্তে শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। তারা গোপনে প্রস্তুতি নেন নিরীহ বাঙালির ওপর আক্রমণের। সব কিছু অনুধাবন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো। তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে নতুন চেতনায় জেগে ওঠে বাঙালি জাতি। ২৫শে মার্চ রাতের আঁধারে বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দখলদার বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে দেশের ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষকসহ সব পেশার মানুষ। ইপিআর, সেনাবাহিনী, আনসার আর সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী।
রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি: স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে আছে, সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া, বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় কর্মসূচি অংশ নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

অন্যান্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর