হাইকোর্টের রায়ে ব্যবসায়ীরা হতাশ

হাইকোর্টের রায়ে ব্যবসায়ীরা হতাশ

দুই বছর ধরে বিজিএমইএ’র এর ভবন নিয়ে হতাশা যেন পিছু ছাড়ছে না ব্যবসায়ীদের। মঙ্গলবার বিজিএইএ’র ভবন ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় প্রকাশ করেছেন, তাতে আরও হতাশ হয়েছেন ব্যবসায়ী মহল।

যে ভবন নির্মাণে দুই নেত্রীর ভূমিকাই রয়েছে, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা মানে দেশের দুই সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে আঙ্গুল ওঠা বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

বিজিএমইএ এ রায়ের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিজিএমইএ ভবন নির্মাণে যেহেতু দুই প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ছিল, সেখানে ভবনটি ভাঙার ক্ষেত্রে জটিলতা থাকবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “বিজিএমইএ দেশের নেতৃস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠন । এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ আইনগত বিষয়ে হলো যে, এখানে যখন দুজন প্রধানমন্ত্রী গেছেন ও উদ্বোধন করেছেন, তার অর্থ তখন তারা সমর্থন দিয়েছেন। আইনের স্বীকৃত নিয়ম হলো- সরকার কোনো স্বীকৃতি দিলে তা থেকে পিছু হটতে পারেনা। কারণ, এটি সরকারের সমর্থনে সরকারের সামনেই হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি কাউকে একটি জায়গায় ঘর বানিয়ে বসবাস করতে দিলাম আবার তা ভাঙতে বললাম, এটা হয়না। বিজিএমইএ এ ব্যাপারে জোরালো আইনি দাবি তুলতেই পারে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
অন্যদিকে, খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের অক্টোবরে ভবনটির আবার উদ্বোধন করেন।

বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, যে কোনো মূল্যে ভবন রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিএমইএ’র ব্যবসায়ীরা।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন অবৈধ বলে ভাঙার জন্য যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তার ওপর হাইকোর্টে আপিল করে স্থগিতাদেশ আরোপ করা হয়।

এবার দুই বছর পর হাইকোর্ট যখন ভবনটি অবৈধ বলে ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে ভাঙার নির্দেশ দেয়, সেই মুর্হূতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল করে ভবনটি না না ভাঙার প্রক্রিয়া বলবৎ রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র বিদায়ী সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আদালতের রায়ের স্থগিতাদেশ এখনও বলবৎ আছে। আমরা এখনও আইনগত কোনো নির্দশনা পাইনি। সুতরাং বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না।”

তিনি বলেন, “তাছাড়া যদি এই স্থগিতাদেশ বলবৎ নাও রাখা হয়, তাহলেও তার বিরুদ্ধে আইনগতভাবে আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবো। আমরা অবৈধভাবে কিছু করিনি। সুতরাং, আইনগতভাবে লড়াই চলছে এবং চলবে। এ বিষয় নিয়ে এর বেশি কোনো কথা বলতে চাইছি না।”

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ’র ওই ভবনের জমির ওপর কোনো মালিকানা নেই। কেননা জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে। অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, কোনো দাবিদার কর্তৃপক্ষের জন্য শুধু জনস্বার্থে কোনো ভূমি অধিগ্রহণ করা যায়। পরে যদি দাবিদার কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণকৃত জমি বা সে জমির অংশ অপ্রয়োজনীয় মনে করে, তাহলে দাবিদার কর্তৃপক্ষ সে জমি সরকার বা জেলা প্রশাসনকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। এ ব্যাপারে দাবিদার কর্তৃপক্ষের কোনো হাত থাকে না। সরকার সে অবস্থায় হয় ওই জমি অন্য কোনো জনস্বার্থে ব্যবহার করবে অথবা জমি মূল মালিকের কাছে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।

জমির বৈধতার প্রশ্নে বিজিএমইএ’র সদস্য ও বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি সালাম মোর্শেদী বলেন, “এ জমি আইন মেনেই বিজিএমইএ কিনেছিল। এক্ষেত্রে সরকারকে তখন ন্যায্য দামও দেওয়া হয়েছিল। এমন না যে নামমাত্র দামে কর্তৃপক্ষ বিজিএমইএ’র কাছে জমিটি বিক্রি করেছিল। এখন হাইকোর্ট যদি ভবন ভাঙার নির্দেশনা দিয়ে থাকে, তার প্রতি পূর্ণ সম্মান আছে আমাদের। সেই সঙ্গে বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও আইনানুগভাবে আপিলও করা হবে।”

বিজিএমএইএ ও এফবিসিসিআই`র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বলেন, “বিজিএমইএ ভবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের মন খারাপ হয়েছে। কারণ, দুজন প্রধানমন্ত্রী এটির অনুমোদন দিয়েছেন। তারা এসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। তাদের কেউ জোর করে আনেনি। এখন দুজন সরকার প্রধান অনুমোদন দেওয়ার পরও এটা নিয়ে সমস্যা হলে আমাদের কিছু করার নেই। এখন এটা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আইনগত পথে চলবে।”

অন্যদিকে, এ ভবন ভাঙা হলে তা অন্যান্যদের কাছে শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবির)।

এবিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আদালতের রায়ের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। এই ভবন ভেঙে ফেলা সবার জন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে। যত বড় শক্তিশালী সংগঠনই হোক, আইন সবার জন্যই সমান।”

আদালতের রায় সবাই মানতে বাধ্য থাকলেও এ বিষয়ে সরকারকে যে কোনো সিদ্ধান্ত খুব ভেবে-চিন্তে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাষ্ট্রিজের (বিসিআই) সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

তিনি বলেন, “সবাই আদালতের রায় মানতে বাধ্য। তবে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অনেক কিছু বিবেচনা করেই। কারণ, বিজিএমইএ দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবসায়ী নেতারা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবেন।”

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর