প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, উনি রক্ত নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান। তিনি দুই বারের প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দলের নেতা। তিনি কিভাবে মানুষের রক্ত চান? যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য তিনি আরও জীবন নেবেন! আর কত রক্ত নেবেন? গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ প্রশ্ন রাখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আর কোন প্রাণ ঝরুক আরও রক্ত ঝরুক তা আমি চাই না। কোন মায়ের কোল খালি হবে তা আমি চাই না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার বক্তব্যে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে যে কোন ব্যবস্থা নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দেয়া বিরোধী নেত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একজন মুসলমান হয়ে আরেকজনকে নাস্তিক বলেন কিভাবে? কে কতটুকু ধর্ম পালন করেন, তা তো সবারই জানা আছে, জেলখানায় তো পাশাপাশি ঘরেই ছিলাম, সব তো জানা, সে কথা আর বললাম না। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত, তারা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ। তারা সেই চেতনা নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে, তা উনার পছন্দ হয়নি।
খালেদা জিয়ার সিঙ্গাপুর সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেনেছিলাম তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি সেখান থেকে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলেও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে ফিরেছেন। এ কারণেই দেশে ফিরে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের পক্ষে সোচ্চার হলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে তিনি কিভাবে তা করতে পারলেন? তিনি বলেন, যখনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে তখনই বিএনপি নেত্রী অস্থির হয়ে গেছেন। আসলে তাদের বিচার তিনি চান না। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা কলঙ্কমুক্ত করবোই।
জনসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সংসদ সদস্য ফজলে নুর তাপস, যুবলীগ সেক্রেটারি হারুনুর রশিদ, শ্রমিক লীগ সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আশরাফুন্নেসা মোশাররফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিকাল তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ পাশের খোলা মাঠে জনসভা শুরু হয়। মাঠের পূর্ব পাশে তৈরি করা হয় বিশাল মঞ্চ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয় উদ্যানজুড়ে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা অংশ নেন জনসভায়।
সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের সঙ্গে গত চার বছরের সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলেই ক্ষমতায় আসতে পারিনি। গ্যাস বিক্রির জন্য আমেরিকা চাপ দিয়েছিল, ভারত চাপ দিয়েছিল। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মুচলেকা দিইনি। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই তারা মানুষ হত্যা শুরু করে। অপারেশন ক্লিন হার্টের মাধ্যমে শ’ শ’ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারতো না। আওয়ামী লীগের গবেষণা সেলে হামলা করে নথিপত্র নষ্ট করা হয়েছিল। টাকা লুট করেছিল। আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করেছিল। এ কারণেই বিগত নির্বাচনে জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিগত চার বছর সময়কালকে শান্তিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে।
জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা নামেই ইসলাম। কাজে কি তা মানুষ জানে।
ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো নিয়ে দেশে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ নিয়ে পাকিস্তানেও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। দেশবাসীকে বলবো এ ধরনের অপপ্রচারে কান দেবেন না।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা বাঁচাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় উলামা-মাশায়েখ, মসজিদের ইমাম ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শান্তি রক্ষায় কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে সকলের সহযোগিতা করতে হবে যাতে আর কোন রক্ত না ঝরে। প্রাণহানি না হয়।
সমাবেশে প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠেছে। তারা ইতিহাস জানে। কোন শক্তি নেই তাদের দমিয়ে রাখার।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিরোধী নেত্রী শাহবাগের তরুণদের নষ্ট ও নাস্তিক বলেছেন। কিন্তু উনার ছেলেরা মানি লন্ডারিংয়ে অভিযুক্ত। তারা নষ্ট। শাহবাগের তরুণরাই খালেদা জিয়ার নষ্ট ছেলেদের চক্রান্ত মোকাবিলা করবে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধদের ওপর আক্রমণ তাদের পুরনো অভ্যাস। এখনও তাদের গায়ে হাত দিয়ে বিরোধী নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে চাইছেন। কিন্তু পারবেন না। সৈয়দ আশরাফ বলেন, পাকিস্তান আমলে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের ওপর হামলা হয়নি। এবার তারা করেছে। যারা এসব ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।